মহসীন শেখ, কক্সবাজার
প্রবল বর্ষণে পানিবন্দি রামুর অর্ধশত গ্রাম, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
চার দিনের টানা বর্ষণে কক্সবাজারের রামু উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্লাবিত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বানভাসিরা। এ দিকে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধস এবং বাঁকখালী নদীতে ডুবে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসে ও বেড়িবাঁধ ভেঙে বিধ্বস্ত হয়েছে বসতঘর। বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বাঁকখালী নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রামুতে দায়িত্বরত গেজ রিড়ার মো. রুহুল আমিন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং এ নিয়োজিত থাকার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়ছে। দুর্গত লোকজনকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাহাড় ধস ও বন্যা প্রতিরোধে স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করতে গত বুধবার সকাল থেকে রামুর বিভিন্ন স্থানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্রে যায়, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি বাঁকখালি নদীসহ কয়েকটি খালের পানি বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে বিধ্বস্ত হয়েছে উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর এলাকার বেড়িবাঁধ ও রাজারকুল ইউনিয়নের শর্মাপাড়ার বেড়িবাঁধ। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে উপজেলার এগার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে দুর্গত মানুষ। গত বুধবার বিকেল থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার। এ দিন রাতে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এতে রামু-মরিচ্যা সড়কের অফিসেরচর এলাকায়, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের জারুলিয়াছড়ি এলাকা, ফকিরা বাজার-জাদিমুরা সড়কের হাইটুপি এলাকা, রাজারকুল-চেইন্দা সড়কের শর্মাপাড়া এলাকা, রশিদনগর-ধলিরছড়া সড়ক, ঈদগাঁহ-ঈদগড় সড়ক প্লাবিত হয়ে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে ছাত্রছাত্রীসহ স্থানীয় জনসাধারণ, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালী নদী, রেজু খাল, সোনাইছড়ি ও কালিরছড়া খালে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ফতেখাঁরকুল, জোয়ারিয়ানালা, কাউয়ারখোপ, রাজারকুল, চাকমারকুলের তেচ্ছিপুল, কলঘর, মোহাম্মদপুরা, শ্রীমুরা, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া এলাকার অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আতঙ্কিত বানভাসিরা গত বুধবার রাতেই বসতঘরের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। আশ্রয় নিয়েছে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
রামু রাজারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার কামাল সোহেল জানায়, গত বুধবার রাতে রাজারকুলের শর্মাপাড়ার বেড়িবাঁধটি প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে যায়। বিধ্বস্ত হয় ওই এলাকার স্বদেশ শর্মা, বাদল শর্মা ও রাখাল শর্মা বসতবাড়ি। ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজারকুল-চেইন্দা সড়ক যোগাযোগ।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের কাজি এম আবদুলাহ আল মামুন জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মনিরঝিল, পূর্ব মনিরঝিল, লামার পাড়া, চরপাড়া, পূর্বপাড়ায় নদী ভাঙন তীব্র হচ্ছে। রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান, পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত লোকজনকে শুকনো খাবার ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার বিকেলে উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আটটি ইউনিয়নকে ১০ হাজার করে এবং অপর তিনটি ইউনিয়নকে পাঁচ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক ত্রান সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা পরিষদ থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
"