জুলফিকার আমীন সোহেল, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)

  ২৮ জুলাই, ২০১৮

বড়মাছুয়া ও রায়েন্দা আন্তবিভাগীয় খেয়াঘাট

যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায়, ঘাট চলছে সাব-লিজে

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ও বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দা আন্তঃবিভাগীয় খেয়া ঘাটে নির্ধারিত টোলের চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজাদারের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের দুর্ব্যবহার, বিভিন্ন প্রকার হুমকি, এমনকি ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, সরকারি দরে লিজ গ্রহণ করার হলেও অবৈধভাবে অধিক লাভে সাব-লিজ দেওয়ায় এই দুরাবস্থা তৈরি হয়েছে। সাধারণযাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায় করায় যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেও কোন সাড়া মিলছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফলে ইজারাদার ও আদায়কারীদের অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে।

বলেশ্বর নদীর দুইপাড় উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দায়। এই দুইজেরলার ফেরী পাড়াপাড়, সড়ক বা বিকল্প পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় বলেশ্বরের দুইপাড় মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ও শরণখোলার রায়েন্দা আন্তঃবিভাগীয় খেয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন খুলনা, মংলা, চালনা, বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, বরগুনা, পাথরঘাটা, বামনা ও মঠবাড়িয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় সহ¯্রাধীক মানুষ যাতায়াত করে।

স্থানীয় ও ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে বঙ্গাবব্দ-১৪২৫ সালের জন্য বড়মাছুয়া আন্তঃবিভাগীয় খেয়া ঘাটটি ২২ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইউপি সদস্য কাইয়ূম হাওলাদার বন্দোবস্থ পান। এর সঙ্গে ১৫% মূল্য সংযোজন কর ও ৫% আয়করসহ আরো ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা যোগ করে মোট ইজারা দাঁড়ায় ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৬ টাকায়। কিন্তু ঘাট ইজারা নিয়েই প্রকাশ্যে ডাক দিয়ে সাব-লিজ দেয় ইজারাদার কাইয়ুম। অভিযোগ আছে, এক্ষেত্রে তিনি ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ও স্থানীয় এক প্রভাশালী নেতার নির্দেশে এই সাব-লিজ দেন।

সম্প্রতি বড়মাছুয়া খেয়া ঘাটে সরজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি চাকরিজীবী সামসুল হক মৃধা, মৎস্য আড়ৎদার ফারুক তালুকদার, জুয়েল শেখসহ একাধিক বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, খেয়াঘাট সাব-লীজ দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও স্থানীয় মো. খলিলুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, ইদ্রিস বেপারী, আ. ছালাম হাওলাদার ও ডালিম ফিডারের কাছে ১০ লাখ টাকা লাভে প্রকাশ্যে সাব-লীজ দেওয়া হয়েছে।

সাব-লীজে অংশ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করে বড়মাছুয়া ইউপি সদস্য সলেমান জানান, দর কম দেওয়ায় খলিলুর রহমান ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় ইজারা পান। এখন সাব-লীজ গ্রহীতারা ঘাট থেকে তাদের ব্যবসার জন্য সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে কয়েক গুণ টাকা বেশি আদায় করছে। যার ফলে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে খেয়ায় ওঠা-নামাকারী গরীব-অসহায়সহ সাধারণ যাত্রীদের। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের নিয়ম না থাকলেও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টোল।

স্থানীয় জানখালী গ্রামের হতদরিদ্র জেলে জলিল শেখ অভিযোগ করেন, গত ১৬ জুলাই তিনি রায়েন্দা থেকে খেয়াযোগে বড়মাছুয়া আসার পর সাবলীজ গ্রহণকারী সালাম বেপারী তার কাছ থেকে ৪০ টাকা খেয়া ভাড়া চায়। এসময় তার কাছে বাড়তি টাকা না থাকায় ২০ টাকা দিলে টোল আদায়কারী তার সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং লঞ্চ পুল্টনে ৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখে। পরে স্থানীয় আবু হানিফ নামে এক ব্যক্তি তাকে ছাড়িয়ে নেয়। তিনি বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে জানান।

সরজমিনে ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, খেয়া পারাপারে সরকার নির্ধারিত টোল জনপ্রতি ৫ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা এবং মটরসাইকেল চালকসহ ১০ টাকার স্থলে (চালক ৪০ ও মটর সাইকেল ৬০-৭০ টাকা) মোট ১Ñ১১০ টাকা করে আদায় করছে সাব-ইজারাদারের লোকজন। এমনকি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে টোল চার্ট বোর্ড টানিয়ে নির্ধারিত টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমন কি লীজ গ্রহনকারী ইজারাদারের ঘাট নির্মাণ ও সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও, নিজস্ব ঘাট না থাকায় বড়মাছুয়া ও রায়েন্দার সরকারি পল্টন ব্যবহার করায় খেয়ার প্রতি যাত্রীকে অতিরিক্ত ৫ টাকা গুনতে হচ্ছে।

বড়মাছুয়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী শাহিন খন্দকার (৩৮) অভিযোগ করে বলেন, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করে আসছেন। মাছ সংরক্ষণের জন্য শরণখোলা থেকে ১শ টাকায় ক্রয় করা একপিচ বরফে খেয়ায় গুণতে হয় দেড়শ টাকা। যা বিগত দিনে কোন ইজারাদারদের দিতে হয়নি। এনিয়ে বর্তমান ঘাটের ইজারাদারদের সাথে বাকবি-ায় তিনি গত একমাস ধরে বরফ আনা বন্ধ করে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

বরগুনা সদরের বাসিন্দা মংলা থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি গত এক বছর ধরে মংলা থানায় চাকুরীর সুবাদে ওই খেয়ায় মটরসাইকেলসহ পার হয়ে থাকেন। তিনি নিজের ভাড়া ৪০ এবং মটরসাইকেলের জন্য ৬০ টাকা করে মোট ১শ টাকা ইজারদারকে প্রদান করেন। একই অভিযোগ শরণখোলার খোন্তাকাটা গ্রামের ফাহিমা বেগম, মঠবাড়িয়ার মো. অহিদুজ্জামান, শাহানাজ বেগম, আ. মালেক ও মঠবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধা হারুন খন্দকারের স্ত্রী পুতুল বেগমেরও।

তবে ঘাট ইজারাদার ও বড়মাছুয়া ইউপি সদস্য কাইয়ুম হাওলাদার তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিঘ্রই খেয়াঘাট সংলগ্ন টোল চার্ট টানানো হবে।

পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আহাম্মদ ছিদ্দিকী বলেন, খেয়া পারাপারকারী যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist