হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ২৪ জুলাই, ২০১৮

শাহজাদপুরে ৬ লাখ মানুষের জন্য পাঁচজন ডাক্তার

আড়াই বছরেও চালু হয়নি নতুন ১৯ শয্যা

শাহজাদপুর উপজেলার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে প্রায় তিন বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও জনবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে হাসপাতালটিতে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার ছয় লাখ ১১ হাজার মানুষ। এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য রয়েছে মাত্র পাঁচজন ডাক্তার। এর মধ্যে দুজন উন্নত প্রশিক্ষণের জন্যে অনুপস্থিত রয়েছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দুটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। বাকি একটি দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। অ্যাম্বুলেন্স দুটি প্রায় দুই যুগ ধরে পড়ে আছে। নির্দিষ্ট বাউন্ডারি দেওয়াল না থাকায় পোতাজিয়া গ্রামের পশ্চিমাংশে জনসাধারণের একমাত্র চলাচলের পথ এই হাসপাতালের মধ্যে দিয়ে। কর্মচারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, যা রয়েছে তা ব্যবহারের অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত। ওই কক্ষগুলোতে প্রতিনিয়ত চলছে অসামাজিক কার্যকালাপ। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত হাসপাতালের বিভিন্ন কোয়ার্টারে চুরির ঘটনা তো ঘটছেই।

বর্তমানে শাহজাদপুর উপজেলার ছয় লাখ ১১ হাজার ১৫৭ জন জনসংখ্যার জন্য এই হাসপাতালে ২৪ জন ডাক্তারের মধ্যে সার্বক্ষণিক আরএমওসহ পাঁচজন মেডিকেল ডাক্তার কর্মরত আছেন। হাসপাতালে নার্স ১৭ জনের স্থলে ১৩ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১৭০ জনের স্থলে ১৩৬ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ২৭ জনের স্থলে ২০ জন এবং নাইটগার্ড দুজনের স্থলে একজন কর্মরত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জোবায়দা মেহেরনাজ জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জড়িত। স্থানীয়রা এটিকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে সর্বদা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিরাপত্তার অভাব। কারণ, হাসপাতালের ভেতর দিয়ে একটি রাস্তা থাকায় সবসময় হাজার হাজার লোক চলাচল করে। এর নির্দিষ্ট কোনো বাউন্ডারি নেই। উত্তর-পশ্চিম-পূর্ব সাইডে যে বাউন্ডারি রয়েছে তা-ও পর্যাপ্ত নয়। তিনি আরো জানান, এখানে ডাক্তারদের জন্য কোয়ার্টার রয়েছে দুটি, যা পরিত্যক্ত। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের থাকার পরিবেশ নেই। ডিজিটাল মেশিন না থাকায় আধুনিক মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। আধুনিক মানের অ্যাম্বুলেন্স, আলট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন, ইসিজি ও ডিজিটাল এক্স-রে, প্যাথলজিক্যাল সুযোগ-সুবিধা নেই হাসপাতালটিতে। এখানে নিজস্ব স্টোর, মালি ও পরিছন্নকর্মী নেই।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালটিকে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বলা যায় না। বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এটি। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি ২০১৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চতর কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করেই ক্ষ্যান্ত তারা। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও তা এখন পড়ে আছে অবহেলা ও অনাদরে। উদ্বোধনের পর থেকেই মূল ফটকে বেশির ভাগ সময়ই ঝুলছে তালা। ভবনের গেটে তাই কুকুর, গরু, ছাগল ও ভবঘুরেদের নিরাপদ স্থান হয়েছে। তারা আরো বলেন, নতুন ভবনটি নির্মাণে রয়েছে নানা ত্রুটি। অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ভবনের ভেতরে চুয়ে পড়ে।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. জোবায়দা মেহেরনাজ সম্পূর্ণ নতুনভাবে এটিকে সাজানোর চেষ্টা করেন। তিনি নানা অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান থাকায় শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শাহজাদপুর উপজেলার লাখ লাখ নারী-পুরুষ। হাসপাতালটিকে আধুনিক মানের ভিত্তিতে গড়ে তোলা ও যুগপোযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist