মো. রাজু খান, ঝালকাঠি

  ২৩ জুলাই, ২০১৮

দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বেতবাগান ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ

ঝালকাঠির জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এক সময়ে বেত ঝাড় (বাগান) ছিল অনেক। বেত দিয়ে বিভিন্ন সৌখিন সামগ্রী তৈরি করতেন কারিগররা। সেই বেতের চাহিদা মেটাতে বেত ব্যবসায়ীরা গ্রাম-গঞ্জে পদচারণা করতেন। নৌকাই ছিল এদের বাহন। নৌকায় করে প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেত সংগ্রহ করাই ছিল তাদের কাজ। বেত কিনে বাগানেই বেতের ওপরের কাটা যুক্ত খোসা ছাড়িয়ে নৌকায় জমা করতেন। সুযোগ বুঝে ফাঁকা মাঠে রোদে শুকিয়ে বেতের শৌখিন ফার্নিচার তৈরি ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কারখানায় মণ হিসেবে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভালো মানের বেত না থাকায় গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বেত ক্রেতারা অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকা অর্জন করছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, ভূটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ। বেত ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ভেজা ও জংলা নিচু ভূমিতে ভালো জন্মে। এটি বর্তমানে আবাসন সংকটের জন্য বিপন্ন প্রজাতি। বেতগাছ সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে। কিছুদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হয়। বেতগাছ জঙ্গলাকীর্ণ কাটাঝোপ আকারে দেখা যায়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও হাওরের কান্দাতে বেত গাছ জন্মে। চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির বেত ফল পাওয়া যায়। এদের কান্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন হয়ে থাকে। সরু ও নলাকার কান্ড প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কান্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কান্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি এই রস খেতে বেত গাছে ভিড় জমায়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে।

শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়, যেমন- চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, মুড়া, ঢুষি, হাত পাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউডি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্প শেড ইত্যাদি। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে রেস্তরাঁ, ঘর বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। বেতের প্রধান ব্যবহার হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। তবে এর ফল সুস্বাদু হওয়ায় তা অনেকেরই কাছেই প্রিয়। ঝালকাঠি সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল ইসলাম বাকলাই জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বেত চাষের জন্য বন বিভাগের বরাদ্দ থাকলেও ঝালকাঠির জন্য কোনো বরাদ্দ আসে না। এছাড়া ফলদ, বনজ এবং ওষুধ গাছের চারা পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। বেত চাষের জন্য বরাদ্দ আসলে বেতকে আরো সম্প্রসারিত করা সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist