আবু নাঈম, শরণখোলা (বাগেরহাট)

  ২৩ জুলাই, ২০১৮

আমন চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

শরণখোলায় ৩২টি জলকপাট এখন কৃষকের গলার কাঁটা

বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত ৩২টি সøুইস গেট (জল কপাট) এখন এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে তাদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত দরজা রক্ষণাবেক্ষণ, কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী পানি ওঠানো-নামানো সম্ভব না হওয়ায় প্রতি বছর আমন মৌসুমে নানা সংকট দেখা দেয়। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকা কঠিন হয়ে ওঠতে পারে। সম্প্রতি ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধটি টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করে চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে নতুন করে বিড়ম্বনার মুখে পড়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা।

জেলা বাতান সূত্রে জানা যায়, ১৫১.২৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শরণখোলা উপজেলায় মোট জমি ১৫ হাজার ১২৯ হেক্টর। এর মধ্যে মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ১৩ হেক্টর। উপজেলায় বার্ষিক খাদ্যের প্রয়োজন ১৯ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উপজেলায় মোট উৎপাদনের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন খাদ্য। ফলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলায় এই খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু জলকপাটের কারণে আমন চাষ ব্যাহত হলে উপজেলার মোট খাদ্য উৎপাদনের ঘাটতি পরবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চারদিক দিয়ে বেষ্টিত ৩৫/১ পোল্ডারের ভেড়িবাঁধে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩২টি সøুইস গেট রয়েছে। ১৯৮৪ সালে নির্মিত বলেশ্বর ও ভোলা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোকে বাঁধ দিয়ে এই সব জলকপাটের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত দরজা থাকায় পানি প্রবাহের গতি কমে যায়। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য রেকর্ডিয় খাল এরই মধ্যে ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রভাবশালীরা তাতে ঘরবাড়ি নির্মাণসহ মাছ চাষের নামে দখল করে নিয়েছে। পাশাপাশি বালু দস্যুদের মাধ্যমে বিভিন্ন খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরাট করে ফেলায় কৃষকদের নিঃশ্বাস একপ্রকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু-একটি জলকপাট থেকে সামান্য পানি প্রবেশ করলেও তা খালের মাথা পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। আবার দখল বাণিজ্যের কারণে সচল থাকা গেটগুলো কৃষকদের কোনো উপকারে আসছে না। অন্যদিকে গেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কৃষকদের কথা চিন্তা না করে গেট বন্ধ করে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, পাউবো ও কৃষি বিভাগের তেমন কোনো নজরদারি না থাকার কারণে প্রায় বছর জুড়েই সচল গেটগুলো বন্ধ থাকছে। উপজেলার খোন্তাকাটা, তাফালবাড়ি, চালরায়েন্দা, ধানসাগর, জিলবুনিয়া এলাকার কয়েকজন কৃষক বলেন, চলতি আমন মৌসুমে এ পর্যন্ত তারা তেমন বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। দু-চারজন বীজতলা ফেললেও বৃষ্টির কারণে তা পঁচনের আশঙ্কা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি, শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের কারণে সঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারছে না বলে তাদের অভিযোগ। একপ্রকার উভয় সংকটে উপজেলার কৃষি নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী।

একটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) পাঁচটি পোল্ডারের ১৬৫টি জলকপাট আছে। কিন্তু এইসব জলকপাটে সরকারিভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফাপগেটগুলো (সøুইস গেটের নিচের অংশ) সব সময় বন্ধ থাকায় ভরাট হয়েছে নদী। অন্য দিকে ফারাক্কা বাঁধের কারণে জেলার ২৩টি নদীতে উজানের পানি না আসার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকে। এতে অতিরিক্ত পলি জমেও ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। এ কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্রুত ভাটায় নেমে যেয়ে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির ঊর্বরতা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের সবুজ প্রকৃতি ।

সংবাদ মাধ্যমগুলো আরো জানায়, জেলায় পলি জমে মরে যাওয়া ২৩টি নদী হচ্ছে পুটিমারী, বিশনা, দাউদখালী, মংলা, ভোলা, ঘষিয়াখালী, কালিগঞ্জ, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, ভাষা, বেমরতা, দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী, দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রা নদী। এছাড়া অতিরিক্ত পলি জমে মরে গেছে বাগেরহাটের তিন শতাধিক ছোট-বড় খাল।

জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, সস্নুইস গেট সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে এক সভা করা হয়েছে। এতে পাউবোর জেলা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়েছে। তারা সবগুলো সøুইস গেট (জল কপাট) শিগগিরই ছেড়ে দিবেন মর্মে আশ্বাস প্রদান করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist