প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ জুলাই, ২০১৮

অব্যাহত নদী ভাঙন

তিন জেলার সাড়ে ছয় হাজার পরিবার হুমকিতে

বাগেরহাটের পানগুছি ও বলেশ^র নদীভাঙনের ফলে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় দেড় হাজার পরিবার এবং দিনাজপুরের করতোয়া নদীভাঙনে পাঁচ হাজার পবিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদী ও তালার কপোতাক্ষ নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ

বাগেরহাট : অমাবশ্যার প্রভাব, বৃষ্টি ও মৌসুমি বায়ুর চাপে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদী ও তৎসংলগ্ন বলেশ্বর নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেড়ে গেছে। ফলে পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোড়েলগঞ্জ পৌরসভাসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর সাথে দেখা দিয়েছে পানগুছি নদীতেও ভাঙ্গন।

পৌরসভা মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় পৌরসভার ১, ২, ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নাম্বার ওয়ার্ডে জোয়ারের পানিতে কমপক্ষে ৩০০ পরিবারে রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। ১ নাম্বার ওয়ার্ডের পিচ ঢালাই রাস্তাটি ধ্বসে গেছে, ডুবে গেছে ফেরিঘাট, এসিলাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শেণিকক্ষ ও মাঠ।

মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী বলেন, গাবতলা ও কাঠালতলা গ্রামের একটি রাস্তা নদীতে গর্ভে চলে যাওয়ায় ৩৩০ টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ডুবে গেছে গাবতলা কমিউিনিটি ক্লিনিক, গিয়াসিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ।

তেলিগাতী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার বলেন, এ ইউনিয়নের হেড়মা, মিস্ত্রীডাঙ্গা ও হরগাতী গ্রামের ১৫শ’ পরিবার গত তিন দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছে। ধসে গেছে তেলীগাতি থেকে এতিমূল্ল্যা বাজারের প্রায় এক কিলোমিটার ইটসোলিং রাস্তা।

এ সম্পর্কে ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় উপজেলা মোড়েলগঞ্জ সদরসহ ৬ ইউনিয়ন ঝুঁকির মধ্যে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী ভেড়িবাঁধ প্রয়োজন।

হিলি (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত গ্রামগুলো হলো- উপজেলার বিনোদনগর ইউপি’র ঘেষা ভোটারপাড়া, কাঁচদহ, উ. কাঁচদহ, উ. মাঝিপাড়া ও দ. মাঝিপাড়া। এসব এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবার ভাঙ্গন অতঙ্কে দিন পার করছেন। তবে নদীর গতি পরিবর্তন করতে পারলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনোয়ার হোসেন জানান।

ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, করতোয়া নদীর প্রবাহ ছিল তাদের গ্রামের প্রায় ১ কি.মি পূর্ব দিক দিয়ে। কিন্তু সেই প্রবাহ ভাঙতে ভাঙতে এখন আমাদের গ্রাম পর্যন্ত এসেছে। এতে করে অনেকের বাড়ী-ঘরসহ জায়গা জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার নদী ভাঙনে বাড়ী-ঘর ছেড়ে যেতে হয়েছে ভোটারপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম, মুনছুর আলী, ইয়াকুব আলীসহ প্রায় ৫০ জন পরিবারকে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে হুমকির মূখে রয়েছে ওই গ্রামের আজিজুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার। এছাড়াও ভাঙনের কবলে কৃষি জমি, ঘরবাড়ী, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ অনেক সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদী ও তালার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী টিআরএম প্রকল্পের বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূতে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হবে শতাধিক গ্রাম। আতঙ্গের দিন পার করছেন এসব এলাকার মানুষ।

স্থানিয়রা জানান, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও আশাশুনি সদরে বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানির চাপে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা জানান।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, খোলপেটুয়া নদীর তিব্র জোয়ারে কুড়িকাওনিয়া, চাকলা, হিজরেখোলা, খালিশখালি এলাকার বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার বলেও এব্যাপাওে তারা কোন কাজ করছেন না।

এদিকে, শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান সাকিল হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নের থানাঘাটা ও হাজরাকাটি এলাকার খোলপেটুয়া নদীর বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকাবাসী বাঁশ খুটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও সেটি টিকে থাকবে না মনে হচ্ছে। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে নষ্ট হবে মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী পাখিমারা বিলে টিআরএম প্রকল্পের বাঁধে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হবে, ভেঁসে যাবে মৎস্য ঘের। স্থানীয়রা জানান, পাখিমারা বিলে টিআরএম প্রকল্পের বাঁধটি ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে। যে কোন সময় পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে। কিন্তু বাঁধ সংস্কারে কারো কোন পদক্ষেপ নেই। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, বাঁধ ভাঙ্গনের বিষয়টি শুনেছি। বরাদ্ধ পেলে বাঁধ সংস্কারের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist