হামিদুর রহমান, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)
স্কুলে ভর্তি করতে গেলেও তাড়িয়ে দেওয়া হয় বেদে সন্তানদের
যাযাবর প্রকৃতির হলেও অস্তিত্বের প্রয়োজনে পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্থায়ী বসত গড়তে আগ্রহী বেদে সম্প্রদায়। কিন্তু তাদের প্রতি এখনো গড়ে ওঠেনি সামাজিক স্বীকৃতি-সহানুভূতি। এমনকি বেদে শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে গেলেও তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় অতি কষ্টে জীবন-যাপন করছেন বলে তাদের অভিযোগ।
হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভার আলাকপুরে বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন। ওই এলাকার রাস্তার পাশে একটি পরিত্যক্ত মাঠে বসবাসরত বেদেনী সর্দার কামরুনেছা এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের নানা দুঃখের কথা বলেন।
কামরুনেছার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কোথাও বিষধর সাপের সন্ধান পেলেই স্থানীয়দের অনুরোধে ছুটে যান তারা। সেখানে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাপ ধরে লোকজনকে বিপদমুক্ত করেন। অথচ মানুষের কাছে নেই তাদের কদর। রাস্তা-ঘাটে চলাচল করতে সহ্য করতে হয় বিদ্রুপ আর মানুষের হাসি-ঠাট্টা।
এই বেদেনী সর্দার আরো জানান, শহরের বিভিন্ন স্থানে ভেষজ ওষুধের মাধ্যমে লোকজনকে চিকিৎসা দেন তারা। কিন্তু বিনিময়ে যা পান তাতে নূন আনতে পান্তা ফুরায়। লোকে ১০-২০ টাকার বেশি দেয় না। সারাদিনে আয় ১০০-১৫০ টাকা। আর প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা অন্তত ৫-৬ জন। এ টাকা দিয়ে খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। উপস্থিত বেদেনীদের পক্ষ থেকে কামরুন নেছা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের জীবনমানের উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। এমনকি তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তির জন্য নিয়ে গেলে সেখান থেকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
পৌর শহরের আলাকপুর এলাকায় বসবাসরত বেদে সরদার রাজু মিয়া জানান, সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাপ ধরতে হয় তাদের। বর্তমান বাজারে প্রতিটি সাপের মূল্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা হলেও তাদের কাছ থেকে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে। এতে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তার আবেদন জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকায় প্রায় ১৫টি বেদে পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ৮-১০টি পরিবার ১০-১২ বছর ধরে ওই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি জায়গায় কোনো অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারা। এ কারণে স্থানীয় লোকজনও তাদের দেখেন হিংসার চোখে। হবিগঞ্জের নবাগত জেলা প্রশাসক মণীষ চাকমা জানান, বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা অনেকটা যাযাবর প্রকৃতির। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিগগিরই খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে জেলা প্রশাসন।
"