আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

  ১৬ জুলাই, ২০১৮

প্রভাবশালীদের দখলে সোনারগাঁয়ের নদী ও খাল

দূষণে বিপর্যস্ত জনজীবন হুমকির মুখে পরিবেশ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নদ-নদী ও খালগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ দখল-দূষণে মারাত্মক হুমকির মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ ছাড়া এই নদ-নদীগুলোতে ফেলা বিষাক্ত বর্জ্যে পড়েছে হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। এ দিকে বর্ষা মৌসুমে শুরু হওয়া অপরিকল্পিত ভরাট উৎসবের কারণে মরুভূমির দিকে ধাবিত হচ্ছে পর্যটন নগরী সোনারগাঁ। ফলে মারাত্মক জলাবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছে উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নবাসী। বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম এসব নদ-নদী ও খালগুলো পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।

পরিবেশ অধিদফতর ও উপজেলা ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দখল ও দূষণে যুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। তবে তা শুরু হবে তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের কাছে।

সোনারগাঁ পৌরসভার বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘরের বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল ঈশাখার আমলে ঐতিহাসিক পঙ্খীরাজ খাল যা পানাম নগর ও ষোলপাড়া হয়ে উদ্ধবগঞ্জ দিয়ে মারীখালী নদের সঙ্গে মিশেছে। সেই পঙ্খীরাজ খালের দুই পাশ প্রভাবশালীরা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে এ খালের অবশিষ্ট এখন নেই বললেই চলে।

স্থানীয় ষোলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, শুনেছি বাপ-দাদার আমলে এ খাল দিয়ে এক সময় বড় বড় জাহাজ ও পাল তোলা নৌকা চলাচল করত। গত কয়েক বছর ধরে খালটি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পৌরবাসীরা মারাত্মক জলাবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছে। এ ছাড়া পৌরসভার টিপুরদী-মোগরাপাড়া খালটি দুই পাশও দখল করেছে স্থানীয়রা। খালের যে এখনো অবশিষ্ট অংশ আছে ওই স্থান দিয়ে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলছে স্থানীয় একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ। ফলে সোনারগাঁ পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নে ২৫ গ্রামের মানুষকে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়ে।

কাইকারটেক হাট থেকে বৈদ্যেরবাজার পর্যন্ত মারীখালী নদের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ও বাড়ি-ঘর। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে দূষিত করা হয়েছে নদের পানি। ফলে নদ সংলগ্ন মোগরাপাড়া, বৈদ্যেরবাজার, পিরোজপুর ইউনিয়ন ও সোনারগাঁ পৌরসভার বাসিন্দারা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়েছে। এ নদের দূষিত পানিতে স্থানীয় প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর, ভাটিবন্দর, রতনপুর, কান্দারগাঁও, নাগেরগাঁও, মৃধাকান্দি, ছয়হিস্যা, আষাঢ়িয়ারচর ও নয়াগাঁও গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মেঘনার দুটি শাখা নদের বিষাক্ত পানি ও বর্জ্যরে দুর্গন্ধে বিপন্ন জীবনযাপন করছে।

ভাটিবন্দর গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলী জানান, উপজেলার সবগুলো নদ-নদী খাল দখল ও দূষণ হচ্ছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে নামে মাত্র উচ্ছেদ করলেও অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী দখলদার ও বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকে।

এ দিকে উপজেলার মেঘনাঘাট ও বৈদ্যেরবাজার এলাকায় কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষ মেঘনা নদী দখল উৎসবে মেতে ওঠেছে। বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মেঘনার শাখা মারীখালি নদীতে সরাসরি ফেলার কারণে এর পানি বিষাক্ত ও কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীরা জানান, বিভিন্ন শিল্পকারখানা কর্তৃপক্ষ যেসব দূষিত পানি সরাসরি নদীতে ফেলছে তা এতই বিষাক্ত যে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে পানির ওপর ভেসে ওঠেছে।

অপর দিকে, উপজেলার সনমান্দি ও জামপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদে পার্শ¦বর্তী আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে পুরো নদের দুপাশের বাসিন্দারা দুর্গন্ধে বসবাস করতে পারছে না। পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ জানান, এক সময়ের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ এখন দখল ও দূষণের কারণে মৃত প্রায়। তারপর নদের পাশ দখল করে প্রভাবশালীরা বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করেছে। প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সোনারগাঁয়ের পরিবেশবাদী লেখক শামসুদ্দোহা চৌধুরী বলেন, সোনারগাঁয়ের নদ-নদী খাল ব্যবহার করে এক সময়ে দেশ-বিদেশের বণিকরা বাণিজ্যের জন্য এখানে আসতেন। কিন্তু এখন সেই খরস্রোতা নদ-নদী ও খালের অস্তিত্ব এখন আর চোখে পড়ে না। দখল ও দূষণে এখন মৃত প্রায়। এগুলো পুনরুদ্ধারের কোনো চেষ্টাও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নেই।

পরিবেশ অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নয়ন মিয়া জানান, সোনারগাঁয়ের নদ-নদী ও খাল যেসব প্রতিষ্ঠান দখল ও দূষণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই আমাদের অভিযান শুরু হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম রুহুল আমিন জানান, আমরা দখলদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করব। সোনারগাঁয়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব খাল, নদ নদী অবশ্যই দখলমুক্ত করে নদী ও খালগুলোর আদিরূপ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist