মো. ইমরান, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়ক বেহাল
মামলা জটিলতায় আটকে আছে নির্মাণকাজ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা থেকে মৎস্যবন্দর মহিপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার সড়ক বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। মামলা জটিলতায় কোনো সংস্কার কিংবা মেরামত না হওয়ায় খানাখন্দসহ বহু গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কটি যানবাহন চলাচলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটার হাজার হাজার পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে কন্ট্রাক্ট কুয়া ১ ও ২-এর আওতায় খেপুপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের দুটি প্রকল্প ২৪% নিম্ন দরে কাজের বরাদ্দ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের সম্পাদিত কাজের ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ সম্পাদিত না করে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ ওঠে। নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই পিচ-খোয়া ওঠে যায়। আবার কোথাও সড়ক ধসে পড়ে। অনেক জায়গার বিটুমিন ওঠে গিয়ে ইট-বালু-খোয়া বের হয়ে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদিত কাজের বিল বাবদ সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি বিল আটকে দেয় সড়ক ও জনপথ।
নকশা অনুযায়ী রাস্তা আরো টেকসই করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সম্পাদিত কাজের ওপরের লেয়ার তুলে অবশিষ্ট লেয়ারের ওপর অতিরিক্ত ১২৫ মি. মি. সাববেজ করার সুপারিশ করে সওজের টেকনিকাল কমিটি। ওই সময়ে প্রধান প্রকৌশলীর গঠিত একটি টেকনিক্যাল টিম ২৬ ফুট প্রস্থ রাস্তার মধ্যবর্তী ১২ ফুট অংশে বেজ টাইপ ১-এর গড় পুরুত্ব ২০০ মিলিমিটারের পরিবর্তে ১৬৩ মি. মি. পাওয়ায় কাজের মান সন্তোষজনক নয় বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। মধ্যবর্তী ১২ ফুট অংশের কার্পেটিংয়ের কাজ খুড়ে ফেলে বেজ কোর্সের কাজ অপসারণ করার পর উক্ত অপসারিত মালামাল দিয়ে পুনরায় বেজকোর্সের কাজ সম্পন্ন করার সুপারিশ করে টেকনিক্যাল কমিটি। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিবেদনকে অবাস্তব আখ্যায়িত করে প্রধান প্রকৌশলী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুব্ধে উৎকোচ দাবির অভিযোগ তুলে মামলা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য রূপসা ইজ্ঞিনিয়ার্স লিমিটেড।
আদলতের নিষেধাজ্ঞায় আটকে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ। তবে সড়কটি চলাচল উপযোগী রাখতে নিজস্বভাবে উদ্যোগ নেয় সওজ। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ করার অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, কি কাজ করে বুঝি না! এক দিকে কাজ করে আরেক দিকে ওঠে যায়।
পাখিমারার ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, ‘খাদায় বৃষ্টির পানি জমে সড়কের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন চলার সময় কাদাপানি ছিটকে সড়কের পাশের দোকানের মালামাল ও পথচারীদের জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহন প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে। প্রায়শই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ পর্যটকরা। কুয়াকাটা-যশোর রুটে চলাচলকারী রূপসা পরিবহনের বাস চালক আলাউদ্দিন জানান, ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে দ্বিগুণ সময় লাগে। ঝাকুনিতে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, জনগুরুত্ব বিবেচনায় পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা থেকে মৎস্য বন্দর মহিপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশে নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে পুনরায় আদালতের শরণাপন্ন হলে আটকে যায় সেই প্রক্রিয়া। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে চলমান সমস্যার নিষ্পত্তি হবে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ সম্পন্ন করা হবে।
"