দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর
আমের ‘অন ইয়ারে’ ক্রেতা নেই মেহেরপুরে
পেঁয়াজ-রসুনের পর এবার ‘অন ইয়ারে’ আম নিয়ে বিপাকের পড়েছে মেহেরপুরের চাষি ও ব্যবসায়ীরা। জেলায় এবার সুস্বাদু আমের ফলন হয়েছে বেশি। ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গাছপাকা আম। তারপরও মিলছে না ক্রেতা। ফলে গলার কাঁটা হয়েছে দাঁড়িয়েছে পাকা আম। প্রতিদিন বাগানেই অন্তত ১০০ মণ ঝরে পড়ে আম নষ্ট হচ্ছে বলে বাগান মালিকদের দাবি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্র্জিত হলেও পূরণ হচ্ছে না বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা। এ বছর তারা ২০৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনার আশা করেছিল।
বাজারে আমের দাম না থাকার কারণ হিসেবে আমচাষিরা জানান, ঈদের আগে ৫ দিনের জন্য লরি চলাচল বন্ধ, রাজধানীসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরের মানুষ ঈদ করতে গ্রামে যাওয়া ও শহরে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে আম বাজারজাত করা যাচ্ছে না। ফলে গাছে পেকে পড়ে নষ্ট হচ্ছে আম।
মেহেরপুর জেলা খামারবাড়ি সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরে ১৫টির কম আমগাছ থাকা বাগান বাদ দিয়ে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এ বছর ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ মণ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। প্রতি মণ আম ১৫০০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হলে ২০৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হতো।
মেহেরপুরে উৎপাদিত আম পাইকাররা লরি বোঝাই করে ঢাকা, সিলেট, চিটাগাং নিয়ে যান। সুস্বাদুর সুখ্যাতির কারণে এই আম ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে নাম ছড়িয়েছে। কয়েক বছর ধরে মেহেরপুরের হিমসাগর ইউরোপিয়ান বাজার দখল করে আছে। কিন্তু এবার ইউরোপের দেশগুলোতে রফতানি হচ্ছে না এই আম। খোলাবাজারেও মিলছে না কাক্সিক্ষত ক্রেতা। ফলে চিন্তায় পড়েছেন আম ব্যবসায়ীরা। আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বাগান মালিকরা জানান, এবার আমের ‘অন ইয়ার’। তাই ফলন বেশি। মেহেরপুরের আম বাগানের মালিক দেলোয়ার রহমান বলছিলেন, এক বছর অন্তর আমের ফলন ভালো হয়। যে বছর ফলন ভালো হয়, সেই বছরকে বলা হয় আমের ‘অন ইয়ার’, যে বছর কম হয় স্থানীয়ভাবে তাকে আমের ‘অফ ইয়ার’ বলা হয়। এখান থেকে বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হচ্ছে হিমসাগর, বোম্বাই আম। তিনি আরো জানান, গত বছর ফলন কম হওয়ায় আমের পাইকারি দর ছিল গড়ে ৩৫ টাকা কেজি। এবার তা ১৫ টাকায় নেমেছে। এর ফলে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের।
আমচাষি ইয়ামিন হোসেন ও খলিলুর রহমান জানান, প্রতি বছর বাড়ছে আম চাষের খরচ। যে ঝুড়িতে (৬০ কেজি আম ধরে) আম রাখা হয়, সেই ঝুড়ির দাম আগে ছিল ৫০ টাকা করে। এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আম পাড়ানোর শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। জেলায় যারা আমবাগান বেচাকেনা করেন তারা সবাই লোকসানের মুখে পড়েছেন। মেহেরপুর বাসস্টেশনের পাশে আমের পাইকারি বাজার। এই বাজারের ব্যবসায়ী মহসিন আলী জানান, যত আম আমদানি হচ্ছে, সে তুলনায় ক্রেতা কম, চাহিদাও কম। আমের বাজার জমলেও দাম উঠছে না। ফলে মাথায় হাত চাষি থেকে ব্যবসায়ীদের। হিমসাগর বা বোম্বাই আমের পাইকারি দাম এখন ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে ঘোরাফেরা করছে। তবে ল্যাংড়া আম ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মুজিবনগর উপজেলার আম বিক্রেতা আলামিন হোসেন, সোহেল রানা, কেদারগঞ্জ বাজারের শফি উদ্দীন জানালেন, এবার ফলন বেশি হওয়ায় আমের দাম অনেক কম। প্রচ- গরমে এখন ক্রেতারাও কম আসছেন। পাইকারি বাজার হলেও সবাই নগদে ব্যবসা করতে চান। আমের ব্যবসায় সেটাও ক্ষতির কারণ। তবে আমের দর কম হওয়ায় আম রসিকদের মুখে হাসি। ঝোলাভর্তি আম নিয়ে রোজ বাজার থেকে বাড়ি আসছেন।
আমের ক্রেতা সংকটের কথা স্বীকার করে মেহেরপুর জেলা খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও বাজারে আমের ক্রেতার অভাবে আমচাষিদের বেচাকেনার আশা পূরণ হবে না।
"