শংকর চৌধুরী, খাগড়াছড়ি
সেতু ভেঙে ৭০ গ্রামবাসীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
খাগড়াছড়ি মাটিরাঙার ধলিয়া খালের ওপর নির্মিত প্রায় ২৫০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়েছে। মাটিরাঙা তক্তমাস্টার পাড়ার ১০ নং খামার বাড়ি সড়কে একমাত্র সেতুটি ভেঙে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৭০ গ্রামের মানুষ। স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ধলিয়া খালে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হয়। এতে একটি মূল পিলারের মাটি সরে গেলে সেতুটি নদীতে ভেঙে পড়ে। এতে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ লাখো বাসিন্দা দুর্ভোগে পড়েছে। কলার ভেলায় পারাপার করতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায় ১৫টি বিদ্যালয়ের শ শ শিক্ষার্থী প্রতিদিন হেঁটেই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় কলার ভেলায় করে পার হতে হচ্ছে। পরাপার হতে গিয়ে প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। বিকল্প সড়ক বা সেতু না থাকায় পাহাড়ি ঢলে প্রবল স্রোতের কারণে বর্ষা মৌসুম ছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মতো ৭০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০০১ সালে সেতু নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এ ব্রিজের উদ্বোধন করেন। এতে দুই পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয়। বর্তমানে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় দুই পাড়ের মানুষ আবারও চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাতে ও মাথায় বই নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও কিছু গ্রামবাসী ক্ষেত-খামারে উৎপাদিত ফসল কাঁধে নিয়ে ধলিয়া খালের ওপর কোমর পানি পার হয়ে বিদ্যালয় ও বাজারে যাচ্ছে। এই সেতুটি দিয়ে দলদলী পাড়া, কাঁঠালতলী, রবিচন্দ্র পাড়া, হেডম্যান পাড়া, কার্বারি পাড়া, তক্তমাস্টার পাড়া, হিলছড়ি, রামানন্দ পাড়া, দুলছড়ি, কাপপাড়াসহ প্রায় ৭০ গ্রামের লাখো পরিবার মানুষ যাতায়াত করে।
মাটিরাঙা ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন সদস্য মহোনি কুমার ত্রিপুরা বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর মানুষের কষ্টের শেষ নেই। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। শান্তি মনি ত্রিপুরা বলেন, গ্রামের কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে কাপড় দিয়ে দোলনা বানিয়ে ভার করে নিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়াও পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পারাপার করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সেতুটি ধসে গিয়ে, দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুটির কারণে ইউনিয়নের দুইটি ওয়ার্ডের প্রায় ৩ মৌজার মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত সেতুটির পুনঃনির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
"