অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ২২ জুন, ২০১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক

আম আছে ক্রেতা নেই

‘আমের রাজধানী’ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের স্বাদ নিতে উদগ্রীব থাকেন সারাদেশের মানুষ। আমের ভরা মৌসুমে তাই দম ফেলার ফুরসত থাকে না আম চাষি ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কিন্তু এবার বাজারে বাজারে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রমী চিত্র। আম আছে, কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতা নেই।

আম চাষ ও বিপণন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় এক মাস হতে চলল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে উঠেছে আম। কিন্তু এখনো বাজার জমে উঠেনি। যদিও এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে গুঁটি ও গোপালভোগ জাতের আম। এখন বাজারে হিমসাগর ও ল্যাংড়া জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহী অঞ্চল অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর আম বাগান।

জেলা বাতায়ন থেকে জানা যায়, জেলায় আম বাজারগুলোর মধ্যে শহরে মহানন্দা নদীর ধারে পুরাতন বাজার, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর বাজার ও শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজার অন্যতম তিনটি বড় বাজার। কানসাট হচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় আম বাজার। এখানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৫০টি আমের আড়ত। কৃষি বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে সাত লাখ ৬৬ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ই উৎপাদিত হয় প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের সাধুরঘাট আমবাজারের ব্যবসায়ী সুকুমার জানালের, এ বছর আমের ভরা মৌসুম পড়েছে রমজান মাসে। রমজান মাসে এমনিতেই আমের চাহিদা কম থাকে। তাই বাজার জমছেনা। কেতাবুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, দেশের অন্যান্য জেলার আমও ঢাকায় যাচ্ছে। সেগুলোকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে কম দামে বিক্রি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। যে কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিচ্ছে।

আম ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতা আর পাইকাররা আগের বছরের মতো না আসায় আমের দাম এ বছর খুবই কম। হিমসাগর ও ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে। খুব বেশি হলে ১৩০০ টাকা মণ পাওয়া যাচ্ছে অথচ গত বছর এই সময়ে হিমসাগর বা ল্যাংড়া আমের বাজারদর ছিল প্রতি মণ দুই হাজার টাকার ওপরে। দাম কম হওয়ার কারণে আম ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ হিমসাগর আম বাগানেই ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা মণ দর হিসাব করে কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখন ওই আম বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা মণ দরে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট আমের খ্যাতি আছে দেশজুড়েই। কিন্তু নানান কারণে আম বাণিজ্যটা ধ্বংসের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আম নামানোর ‘সময়সীমা’ বেঁধে দেয়ার ফলে। সময়সীমা বেঁধে দেয়ায় এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে সারাদেশে আম বাজারবাত করতে হচ্ছে। এতে ঢাকার আমের মোকামগুলোতে বিপুল পরিমাণ আম সরবরাহ হচ্ছে। এতে দাম কমে যাচ্ছে। তিনি সময়সীমা বেঁধে না দেয়ার অনুরোধ জানান প্রশাসনের প্রতি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন লক্ষমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist