আব্দুস সালাম বাবু, বগুড়া

  ২১ জুন, ২০১৮

বগুড়ায় পুরনো লোহায় কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরিতে বিপ্লব

বগুড়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনে পুরান লোহা, জাহাজ ভাঙা লোহা গলিয়ে তৈরি হচ্ছে কৃষি যন্ত্রপাতি। পুরান শ্যালো মেশিন, পাওয়ার টিলার, লেদ ওয়ার্কশপের ফেলনা লোহার টুকরো কেজি হিসেবে ক্রয় করে তা গলিয়ে তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও বিক্রি হচ্ছে উত্তরের ১৬ জেলায়। ভাঙারি লোহা দিয়ে তৈরির করার ফলে বিদেশ থেকে নতুন করে লোহা আমদানি করতে হচ্ছে না। আর স্থানীয় অর্থনীতির চাকা শক্ত হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা বলছেন।

জানা যায়, স্বাধীনতার আগে থেকে বগুড়ায় বিভিন্ন রকমের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হয়ে আসছে। শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বিসিক শিল্প ও কাটনারপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় এই ধরনের ওয়ার্কশপ ছিল। উত্তরের জেলাগুলো কৃষিভিত্তিক হওয়ার কারণে এই কৃষি যন্ত্রের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে এই শিল্প বিকাশিত হয়ে জেলার সবচেয়ে বড় শিল্প কারখানায় রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে আছে পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, কৃষির জন্য ব্যবহৃত ফলা, শ্যালো মেশিনের পার্টস, পানিসেচের জন্য যন্ত্রাংশসহ কৃষিকাজের বিভিন্ন পার্টস।

বগুড়ার ভাঙারি ফেরিওয়ালা ব্যবসায়ী ও ওয়ার্কশপ শ্রমিক মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক শ্রেণির ভাঙারি লোহার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপায়ে এই লোহা উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে। সংগ্রহের পর বগুড়ার বিসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ৩০টি ঢালাই কারখানার মালিকদের কাছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন।

পুরাতন লোহা সংগ্রহকারী আসাদ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থান থেকে লোহা ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজি আবার কখনো ৩০ টাকা কেজি কিনে নিয়ে আসে। সেই সব লোহাকে ভাঙারির মধ্যে থেকে আলাদা করা হয় ঢালাই লোহা, মাইল্ড স্টোন (এমএস) এসএস ও কাস্ট আয়রন হিসেবে কিছুটা আলাদা করা হয়। আলাদা এই লোহা বিসিকের শিল্প মালিকদের কাছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

তারা আরো জানান, চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙার লোহা বগুড়ায় বিক্রি হয় সাধারণত ৩ থেকে ৪ টাকা কমে। এই লোহা আবার বগুড়ায় টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হয়। কোনো কোনো ঢালাই কারখানার মালিক চট্টগ্রাম থেকে কেটে ট্রাকে করে বগুড়ায় নিয়ে এসে গলিয়ে কাজ শুরু করে। এই পুরাতন লোহা ক্রয় বিক্রয়, তারপর এটি গলানো নতুন পণ্য তৈরি করা পর্যন্ত একটি বৃহৎ শ্রমবাজার জড়িয়ে আছে বলে ওয়ার্কশপ মালিকরা বলছেন। কয়েক হাজার পরিবার এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

সরেজমিনের জানা যায়, বগুড়া শহরের শাপলা সুপার মার্কেট, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, গোহাইল রোড, বিআরটিসি মার্কেট এলাকায় অচল হয়ে পড়া পাওয়ার টিলার, শ্যালো মেশিন কেনাবেচা হয়। বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, হিলি, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনাসহ উত্তরের ১৬ জেলার পাশাপাশি, ঢাকার ধোলাইখাল, চট্টগ্রাম পোর্ট, যশোর থেকেও পুরাতন শ্যালো মেশিন ও পাওয়ার টিলার সংগ্রহ করা হয়। পুরাতন পাওয়ার টিলার ও শ্যালো মেশিন কিনে নেওয়া মেশিনগুলো পার্ট বাই পার্ট খুলে ভালো ও সচল থাকা পার্ট বিক্রি করছে কৃষকদের কাছে আর বাকিটা বিক্রি হচ্ছে ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছে।

বগুড়া শহরের বিসিক শিল্পীনগরীর প্রতিষ্ঠান গুঞ্জন মেটাল ওয়ার্কসপ সূত্রে জানা যায়, আগে ব্যবহৃত বা পুরাতন লোহা ক্রয় করা হয় বাজার দরে। বর্তমান বাজারে পুরাতন লোহা ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই পুরাতন লোহা গলানো হয় সিলিকন, পিগআয়রন ও হার্ডকোক দিয়ে। গলানোর পর তা বিভিন্ন ছাঁচে ঢেলে দিয়ে একটি আকৃতি তৈরি করা হয়।

বগুড়া শহরের রেলওয়ে কৃষিপণ্যের মার্কেটের বসাক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশ^জিৎ বসাক জানান, ঢালাই কারাখানায় পুরাতন লোহা গলানোর পর ছাঁচে দিয়ে জমানো হয়। সেই জমানো লোহাকে তারা লেদ বা ওয়ার্কশপে ফিনিশিং দিয়ে থাকেন। তারা ছাঁচে জমানো লোহা ক্রয় করেন ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। কখনো কখনো এই দাম ওঠা নামা করে। বগুড়ায় তৈরি কৃষিপণ্য তৈরি হয় পুরাতন লোহা গলিয়ে।

বগুড়া বিসিকের মিল্টন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মকর্তারা জানান, আশির দশকে ব্যক্তি উদ্যোগে বগুড়াতেই প্রথম ফাউন্ড্রি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। বর্তমানে ১৬ ধরনের উন্নত যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। এর মধ্যে ফাউন্ড্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বেশ কিছু ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে। যারা ফিনিশিং দিচ্ছে এবং মার্কেটে দিচ্ছে কৃষিপণ্যগুলো। কৃষি পণ্য মানেই শ্যালো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, পাওয়ার টিলারের যন্ত্রাংশ, পানি সেচের যন্ত্রাংশ। এরমধ্যে রয়েছে কৃষির জন্য পাওয়ার টিলারের লোহার চাকা, শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, মেশিনের যন্ত্র পিস্টন, গজল পিন, লাইনার হেডপিট তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে ইদানিং তৈরি হচ্ছে যানবাহনের ছোট পার্টস, কলকারখানার প্রয়োজনীয় পার্টস।

বগুড়া ফোরাম অব এগ্রো. মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড প্রসেসিং জোন সভাপতি আযম টিকুল জানান, বগুড়ায় মেশিনারিজের যন্ত্রাংশ তৈরি করে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত। উৎপাদন বাড়াতে পারলে আরো বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কয়েকটা ধাপে ধাপে এ কাজটি হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। বিদেশ থেকে আর নিয়ে আসতে হচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist