জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ২০ জুন, ২০১৮

তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি আগাম বন্যার আশঙ্কা

কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটের ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে নতুনভাবে বিপদসীমার পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। গতকাল মঙ্গলবার সারাদিনে তিস্তা নদীর প্রবাহ বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জল কপাট খুলে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যার আশঙ্কাও করছে তিস্তা অববাহিকার কয়েক লাখ মানুষ।

এদিকে পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা উপজেলা ও লালমনিরহাটের চর ব্যষ্টিত গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। তিস্তা অববাহিকার জন প্রতিনিধিরা জানায়, তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি মানেই উজানে ভারি বৃদ্ধিপাত ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেওয়া।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ বাইশ পুকুর পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ২০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আরো ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। সূত্র মতে, গত রোববার এই পয়েন্টে সকাল ৬টায় ৫২ দশমিক ১০ মিটার ও গত শনিবার ৫১ দশমিক ৯৫ মিটারে পানি প্রবাহ ছিল। যা গত তিন দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার ডালিয়া পয়েন্টে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার।

এলাকাবাসী জানায়, চর গ্রামের ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ না করলেও পলিতে ভরে থাকা তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই পানি উপচে এলাকা প্লাবিত করে দেয়। ফলে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাধে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে হয়। বর্ষাকাল শুরু হলে উজানের ঢলে তিস্তা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব কিছু।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম জানান, বর্ষাকালে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বন্যা দেখা দিবে। আমরা সর্বদা সর্তকাবস্থায় রয়েছি। তিনি আরো জানান, এবার নতুন করে তিস্তা নদীর বিপদ সীমার পরিমাপ (গেজ রিডার) বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দফায় বিপদসীমার পরিমাপ বৃদ্ধি করা হলো ৩৫ সেন্টিমিটার। পূর্বের পরিমাপের চেয়ে এবার ২০ সেন্টিমিটার বেশি বৃদ্ধি করা হয়। এর আগে পরিমাপটির প্রথম দফায় ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, উজানের গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণের ফলে তিস্তা নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। ফলে উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তা নদী বিপদসীমা অতিক্রম করে থাকে। অথচ নদীর চর ডুবে যায় না। তাই তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে সর্ব প্রথম তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার পরিমাপ (গেজ রিডার) ছিল ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। যা ২০০৭ সালের ৭ জুলাই ৫২ দশমিক ২৫ মিটার পরিবর্তন করে তা ৫২ দশমিক ৪০ মিটার বৃদ্ধি করা হয়। এরপরও উজানের নেমে পানিতেই বাংলাদেশ অংশের তিস্তা বারবার বিপদসীমা অতিক্রম করতে থাকে। ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে ভারতের গজলডোবার জলকপাট উন্মুক্ত করে দেওয়াসহ ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ৯৮ বছরের মধ্যে পলিতে ভরাট তিস্তা অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। সে সময় নদীর পানি বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০ মিটারের অতিক্রম করে ৫৩ দশমিক ০৫ মিটার অর্থাৎ ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

তাই তিস্তা নদীর বিপদসীমা পরিমাপ সংখ্যাটি দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তন করে তা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাবে এবার পরিমাপের সংখ্যা করা হয়েছে ৫২.৬০ মিটার। যা গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর হতে কার্যকারিতা করা হয় বলে জানান ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist