দিনাজপুর ও গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
ঈদ ও ফুটবল বিশ্বকাপে জমজমাট উত্তরের বাজার
ঈদের আকর্ষণ ‘অপরাধী ড্রেস’
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, দিনাজপুরের শপিং মলগুলোয় বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। কোথাও কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা এ জেলায় প্রতিবার ভারতীয় কাপড়ের দাপট থাকলেও এবার সামাজিক যোগাগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কারণে দেশি পোশাক কিছুটা ক্রেতা সাধারণের নজর কেড়েছে। ফেসবুকের ভাইরাল হওয়া অপরাধী গানের অনুকরণে বাজারে মিললে ‘অপরাধী ড্রেস’!
গতকাল শনিবার দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার মার্কেটের সামনে কথা হচ্ছিল মিশন রোড এলাকার জেরিনের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আগামী শুক্রবারই হয়তো শেষ রোজা। এরপর ঈদ। এত ভিড়ের মধ্যেই বিক্রেতাদের কাছে প্রশ্ন ছিলÑকেমন হলো রমজানের তৃতীয় শুক্রবারের বেচা-বিক্রি? উত্তর দেওয়ার সময় কোথায়! একাধিকবার জানতে চাইলে প্রশ্নকর্তার দিকে না তাকিয়ে বললেন, ‘ভালো। ভালো।’ রমজান মাসের তৃতীয় শুক্রবার ছুটির দিনে দিনাজপুরবাসীর কেনাকাটার ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। যেমন ছিল ভিড়, তেমনি ছিল বিক্রি। ফুটপাত থেতে অভিজাত বিপণিবিতান, পাড়া-মহল্লার বুটিক হাউস থেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের আউটলেটÑসর্বত্রই ছিল রমরমা কেনাকাটা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এবার ঈদের কেনাকাটার মেয়েদের মন কেড়েছে ‘অপরাধী ড্রেস’। অপরাধী ড্রেসগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে। দিনাজপুরের ‘গরিবের মার্কেট’ বলে খ্যাত কাছারি বাজার, স্টেশন উত্তরা মার্কেট, জাভেদ সুপার মার্কেট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল দারুণ জমে গেছে ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতার ভিড়ের এ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, পুরো দিনাজপুরই যেন এক বিপণিবিতান। এসব বিপণিবিতানের শাড়ি, রেডিমেড সালোয়ার-কামিজ এবং শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখানে দরদাম করে সাধ্যের মধ্যে সাধের পোশাক কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের। হাল ফ্যাশনের পোশাক থেকে শুরু করে অলঙ্কার ও প্রসাধনী, নারীদের সবকিছুই রয়েছে এ দুই বিপণিবিতানে। ফুটপাত ঘিরে রয়েছে নারীদের পোশাক ও স্যান্ডেলের বিশাল বাজার। সব বয়সী নারীর কাছে এই স্যান্ডেলের বাজার খুবই জনপ্রিয়। দাম ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। দুই হাতে নানা রকম পোশাকের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়ানো দুই বন্ধু রাজু ও শামীমের কাছে দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঈদের বাজার হিসেবে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তবে মানসম্পন্ন পোশাক কিনে খুশি তারা।
এদিকে বেচাকেনায় পিছিয়ে নেই টিভি বিক্রিতারাও। ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিভিন্ন অফারে রকমারি টেলিভিশনও কিনছেন খেলাপাগল ক্রেতারা। অনেকেই ইতোমধ্যে বিশাল আকারের টিভি কিনেছেন বিশ্বকাপ খেলা দেখবে বলে। সব মিলে বিশ্বকাপ ও ঈদ কাছাকাছি। এবারের ঈদুল ফিতরের বাজারটি বেশ মজাদার ও চাঙা। সব ব্যবসায়ীই খুশি। এবার ঈদের সব প্রসাধনী, কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল ভালো বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলোয় শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর পোশাক-পরিচ্ছদ ও জিনিসপত্রের দাম বেশি হলেও উপচে পড়া ভিড় অভিজাত শপিং মল ও ফুটপাত।
ঈদকে কেন্দ্র করে গোবিন্দগঞ্জের মার্কেটগুলো ব্যাপক রকমারি পণ্যে সাজানো হয়েছে। তবে এসব দোকানগুলোয় চোরাচালানের ভারতীয় পণ্যসামগ্রীই বেশি। ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় মালামালের চোরাচালানও চলছে ব্যাপক হারে। প্রতিদিন হিলি থেকে লাখ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় পোশাকসহ বিভিন্ন মালামাল চোরাকারবারিরা গোবিন্দগঞ্জে আনছে। ব্যবসায়ীরা জানান, শিশু ও মহিলাদের পোশাক যেমন দুই পার্ট, গাউন, থ্রিপিস, ফ্রক, সিল্ক কাতান, জামদানি, তাতের শাড়ি, সুতি প্রিন্ট ইত্যাদির আর ছেলেদের পোশাকের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে দেশীয় ও ভারতীয় শার্ট, ডিজাইন শার্ট, বাহারি ডিজাইনের জিন্স প্যান্ট, আর রঙিন প্রিন্ট ও নকশা করা পাঞ্জাবি। তবে দাম গত বছরের বেমি। জুতার দোকানগুলোয় সব বয়সের মানুষেরই ভিড় দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা জানান, দাম বেশি হলেও স্ত্রী, সন্তানদের আবদার আর বাড়ির লোকদের জন্য ঈদের এ উৎসবে খরচ তো করতেই হবে।
"