আল মামুন জীবন, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)
বালিয়াডাঙ্গীতে মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে নয়ছয়!
রিনা খাতুন, জন্ম সনদ অনুযায়ী, তার বয়স ১৮ বছর হতে আরো ১০ দিন বাকি। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, তার বিয়ের বয়স না হলেও সে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২নং চাড়োল ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামের বেলাল আলীকে বিয়ে করে ইতোমধ্যে মাতৃত্বকালীন সুবিধা ভোগ করছেন। নিয়মিত ভাতাও উত্তোলন করছেন তিনি। ওই ইউনিয়নের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের জন্য উপকারভোগীর অগ্রাধিকার তালিকায় ১৭ নং ক্রমিকে তার নাম রয়েছে। শুধু তিনিই নন ১২ নং ক্রমিকে খালিপুর গ্রামের সমবারুর স্ত্রী তুলা রাণীর বয়স ১৫ বছর। তিনিও মাতৃত্বকালীন ভাতা পেয়ে আসছেন। ১০১ নং ক্রমিকে চাড়োল ইউনিয়নের মঞ্জুর আলীর স্ত্রী সাবানা নামের তিন সন্তানের মায়ের নামও রয়েছে।
উপজেলা মহিলা-বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাতৃত্বকালীন ভাতা সুবিধাভোগী হতে হলে দুস্থ পরিবার, বয়স কমপক্ষে ২০ বছর ও ভাতা তালিকা অন্তর্ভুক্তির সময় ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকতে হবে। বয়স ও অন্তঃসত্ত্বা সম্পর্কিত প্রত্যয়ন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড পরিবার কল্যাণ সহকারী, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদান করবেন। তবে দুই সন্তানের বেশি হলে মাতৃত্বকালীন সুবিধার আওতায় আসতে পারবে না।
অথচ বয়স ও অন্তঃসত্ত্বা-সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের দেওয়া তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শুধু চাড়োল ইউনিয়নের নয়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই। যাচাই করা হয়নি আর্থিক অবস্থা, সঠিক বয়স, নেওয়া হয়নি অন্তঃসত্ত্বা সম্পর্কিত বয়স। তিন সন্তানের জননীর নামও রয়েছে তালিকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুবিধাভোগী বলেন, ইউপি মেম্বরদের ৪-৫ হাজার টাকা দিলেই মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগী ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এক্ষেত্রে গরিব, বয়স ও অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি যাচাইয়ের কোনো প্রয়োজন পড়ে না।
চাড়োল ইউনিয়নের পুরো তালিকা দেখিয়ে ওই ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক অবদুস সালামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকায় থাকা ২২ জনের মধ্যে কাউকেই তিনি বয়স ও অন্তঃসত্ত্বা-সংক্রান্ত প্রত্যয়ন প্রদান করেননি। এমনভাবে অন্যান্য ইউনিয়নেও কোনো প্রত্যয়ন ছাড়াই মাতৃত্বকালীন ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ইউপি সচিব ও ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকদের।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন সুবিধাভোগী জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ইউপি মহিলা সদস্যদের ৩-৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কয়েকজনের অভিযোগ, টাকা কম দেওয়ার কারণে সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম আসেনি তাদের। সোনালী ব্যাংক বালিয়াডাঙ্গী শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর ৮ ইউনিয়নের ২২ জন করে সর্বমোট ১৭৬ জনের নামে মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগী ভাতা পাওয়ার জন্য হিসাব খোলা হয়েছে। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মুনিরুজ্জামান বলেন, হিসাব খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলেই আমার আর্থিক লেনদেনের জন্য হিসাব খুলে দিই।
এ বিষয়ে চাড়োল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চ্যাটার্জী বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের নিকট সবাই সুবিধার জন্য আবেদন করে। আমরা সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করি। তদারকির দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল সিদ্দিক জানান, চেয়ারম্যানদের চাপে তালিকা প্রণয়নের সময় অনেক কিছু যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। তদারকি করার দায়িত্ব আপনার এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মাসিক মিটিং কথা বলব আমি।
"