আবদুস সালাম বাবু, বগুড়া

  ০৯ জুন, ২০১৮

অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ বগুড়ায় বাড়ছে মুখিকচুর চাষ

* ধান উৎপাদনে খরচ বেশি লাভ কম। তাই ধান-পাটের পরিবর্তে কচু চাষে ঝুঁকছেন কৃষক * কচু মানবদেহে শর্করা সরবরাহ করে। কচুতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে

বগুড়া সদর, ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার চাষিরা মুখিকচু চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছে। এখন পর্যন্ত ভালো ফলন পাওয়ার বিষয়ে চাষিরা আশাবাদী। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে মুখীকচু চাষ হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে মুখীকচু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলায় এবার কৃষকরা মুখীকচু চাষে ঝুঁকে পড়েছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে এবং বিক্রির পর লাভ বেশি হয়ে থাকে বলে মুখীকচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে চাষিরা। জেলায় সবচেয়ে বেশি কচু চাষ হয়ে থাকে বগুড়া সদর উপজেলা ও সোনাতলা উপজেলায়।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, সোনাতলা উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ১০ হেক্টর জমিতে কৃষক লাভজনক সবজি মুখীকচুর চাষ করেছে। উপজেলার মূলবাড়ী, কোয়ালিকান্দি, পাঠানপাড়া, ধর্মকুল, কর্পূর, পুগলিয়া দিঘলকান্দী, হুয়াকুয়া, নিশ্চিন্তপুর, আমতলী, পাকুল্যা, মধুপুর, উত্তর করমজা এলাকার মুখীকচু চাষিরা জমিতে পরিচর্যা করছেন। বগুড়া সদরের শাখারিয়া ইউনিয়ন, বাঘোপাড়া, আশোকোলা, নারুলী, সাবগ্রাম এলাকায় প্রচুর মুখীকচু চাষ হয়েছে। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের স্বাধীন মিয়া জানান, এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে মুখীকচু চাষ করেছেন। গাছের চেহারা হয়েছে বেশ ভালো। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কচু বিক্রি করতে সক্ষম হবেন।

একই গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছেন। কচু উৎপাদনে লাভ বেশি। কমবেশি অন্যান্য তরিতরকারীর সাথে পরিবারের সদস্যদের খাবারের কাজে ব্যবহার করা যায়। ধান উৎপাদনে খরচ বেশি লাভ কম। তাই এবার তিনি ধান পাটের পরিবর্তে কচু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মন করে ফলন পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, গত বছর বগুড়ায় মুখিকচু বিক্রি হয়েছে নতুন অবস্থায় ৪০ টাকা কেজি এবং পুরোদমে কচু উত্তেলন শুরু হলে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। সে হিসেবে বগুড়ার বাজারে প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকা মন। এক বিঘা জমি থেকে প্রতি জন কৃষক ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মুখী কচু বিক্রি করেছেন।

সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন সরদার জানান, কৃষক জমিতে মুখী কচু রোপন করার ৫-৬ মাস পর কচু বিক্রি করতে পারে। এই সবজি চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ খুব কম লাগে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কৃষক জৈব সার ব্যবহার করে এই ফসল ফলাতে সক্ষম হয়। কচু মানব দেহের শর্করা সরবরাহ করে। কচুতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এছাড়াও পটাশিয়াম, ফসফরাস, সালফার ও আয়রন থাকে। সোনাতলা উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গাবতলী ও বগুড়া সদর উপজেলার কৃষক রেকর্ড পরিমাণ জমিতে মুখীকচু চাষ করেছে বলে তিনি জানান। আগের থেকে উপজেলায় কচু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমান জমিতে কচু চাষ হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, জেলায় গত বছর ২০০ হেক্টরের বেশি পরিমাণ জমিতে মুখীকচু চাষ হয়েছিল। এ বছর ২৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে এবার। এক বিঘা জমিতে মুখীকচু চাষ করতে খরচ হয় সর্ব্বোচ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর এক বিঘা থেকে কচু পাওয়া যাবে ৬০ মণ। গত বছর পাইকারি বাজারে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ঈদের পর চাষিরা মুখীকচু বাজারে তুলতে শুরু করবে। এ বছরও মুখীকচুর ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মুখী কচুরজাত পরিচিতি দেশি জাত; মুখী কচু বাংলাদেশের গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু, ইত্যাদি নামে ও পরিচিত। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উন্নত জাতে মুখী কচু উদ্ভাবন করেছে। রোপণের সময়ঃমধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মুখী কচু রোপণের উপযুক্ত সময়।

রোপণ পদ্ধতি: একক সারি পদ্ধতি- উর্বর মাটির জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৫ ফুট। অনুর্বর মাটির বেলায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ ফুট ৪ ইঞ্চি রাখতে হয়। ডাবল সারি পদ্ধতি- এ পদ্ধতিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২.৫ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২.০ ফুট বেশি উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আড়াই ফুট দূরে দূরে লম্বালম্বি দাগ টানতে হয়। এই দাগের উভয় পাশে ৪ ইঞ্চি দূর দিয়ে ২ ফুট পর পর বীজ লাগিয়ে যেতে হয়। এতে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব ২২ ইঞ্চি এবং এক সারির দুই লাইনের মধ্যে দুরত্ব হয় ৮ ইঞ্চি। এই পদ্ধতিতে বীজ লাগালে ফলন প্রায় ৪০-৫০% বেড়ে যায়। দুই সারির ৩ টি বীজ সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ উৎপন্ন করবে। বীজের হারমুখীর ছড়া বিঘা প্রতি ৬০-৮০ কেজি (১৫-২০ গ্রাম ওজনের মুখী) প্রয়োজন হবে। মুখী কচুর সার ব্যবস্থাপনা-মুখী কচুর ভাল ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) মাঝারি উর্বর জমির জন্য সার প্রয়োগ করতে হবে কৃষিবিদদেও পরামর্শ মত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist