খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)
স্বাস্থ্যসেবার নামে বাণিজ্য
বেহাল রানীশংকৈলের বেসরকারি ক্লিনিকগুলো!
ক্লিনিকের ছোট ছোট ওয়ার্ড, কেবিনে রোগী ভরা। সাদা অ্যাপ্রোন পরা নার্সরাও ছোটাছুটি করছেন। অস্ত্রোপচার কক্ষও (ওটি) সাজানো রয়েছে যন্ত্রপাতিতে। নেই শুধু সার্বক্ষণিক চিকিৎসক। যখন যাকে পাওয়া যাচ্ছে তখন তাকে ডেকে নিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
ঠিক এভাবেই ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার নামে হচ্ছে চরম বাণিজ্য। যেকোনো অস্ত্রোপচারের জন্য এক রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়াও নার্স ও অন্যদের বকশিশসহ আরো ২ হাজার টাকা দিতে হয় বলে ক্লিনিকগুলোতে ঘুরে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর এসব ক্লিনিক পরিচালনায় রয়েছেন উপজেলার রাজনৈতিক নেতা, সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্লিনিকগুলোর অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে তেমন পর্যবেক্ষণ না করার অভিযোগ রয়েছে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্বে। লাইসেন্সবিহীন অথবা লাইসেন্স নবায়ন না থাকলেও হরহামেশায় অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় চলছে ক্লিনিকগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় দইুটি নতুনসহ মোট পাঁচটি ক্লিনিক রয়েছে। এগুলো হলো সেন্টাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, আল মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, সিটি ক্লিনিক, মা ও শিশু হাসপতাল প্রাইভেট লিমিটেড ও সেবা ক্লিনিক। এর মধ্যে প্রথম তিনটির লাইসেন্স নবায়ন নেই। নতুন দুইটির লাইসেন্স নেই।
এদিকে, উপজেলার বন্দর এলাকায় ডা. কমলাকান্তের বাসভবনে আরো একটি নতুন ক্লিনিক হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শুধু লাইসেন্স নেই তা নয়। নেই প্রশিক্ষিত নার্স, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
নিয়মানুসারে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে রোগীর অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা ও তত্ত্বাবধানের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রতি ১০ শয্যার জন্য একজন সার্বক্ষণিক নিবন্ধিত চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু উপজেলায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে এ নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না চিকিৎসক।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে সিটি ক্লিনিকে দেখা যায়, ছোট কক্ষে চারটি বেড রাখা হয়েছে। একজন রোগীর হাঁটাচলার মতো জায়গাও রাখা হয়নি। নেই পরিবশে। একই অবস্থা সেন্ট্রাল ক্লিনিক ও আল মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও। এই তিনটি ক্লিনিকে নেই প্রশিক্ষিত নার্স। আর নতুন দুটি স্বাস্থ্যসেবার নামে অবাধ বাণিজ্য করে চলছে। পুরাতন তিনটি ক্লিনিকের রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা।
এ প্রসঙ্গে আল মদিনা ক্লিনিকের শেয়ার মালিক আবু সাঈদ বলেন, ‘আমাদের লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সব নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা আমরা করি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহেল মাফি গত বুধবার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য নেই।’
"