সদরুল আমিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ)

  ২৮ মে, ২০১৮

ধ্বংসের পথে দেশের একমাত্র রজ্জুপথ

* পাথর পরিবহনে ৪২৫টি বাক্স নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ৩০৫টি বাক্স পরিত্যক্ত * ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ এলাকায় বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে * রজ্জুপথটি ভাড়া নেওয়ার জন্য প্রাইম গ্রুপের লিখিত প্রস্তাব

সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতকে স্থাপিত দেশের একমাত্র রজ্জুপথ (রোপওয়ে) প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতায় এটি এখন ধ্বংসের পথে। দিনের পর দিন পথটি বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি। অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকায় ইতিমধ্যে এর যন্ত্রাংশও চুরি হয়েছে। এ অবস্থায় কবে এ পথ চালু হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

রজ্জুপথটি বন্ধ থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল জোন থেকে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। এটি চালু না হওয়ায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রজ্জুপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই সংরক্ষিত এলাকায় পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলছে। এতে প্রভাবশালী চক্র থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। জেলা রেলওয়ে সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ থেকে উত্তোলিত পাথর পরিবহনে স্থল ও জলপথের বিকল্প হিসেবে রজ্জুপথ স্থাপন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এটি নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৭০ সালের শেষদিকে চালু হয়। এর ১১৯টি খুঁটি রয়েছে, দৈর্ঘ্য ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। রজ্জুপথের লোডিং স্টেশন (বাঙ্কার) ভোলাগঞ্জে ও খালাস স্টেশন সুনামগঞ্জের ছাতকে।

আরো জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় রজ্জুপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় টানা ৮ বছর এটি বন্ধ থাকে। সংস্কার শেষে ১৯৭৮ সালে পুনরায় পাথর পরিবহন শুরু হয়। পাথর পরিবহনে ৪২৫টি বাক্স নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ৩০৫টি বাক্স পরিত্যক্ত। রেলওয়ের গুদামে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে ১২০টি বাক্স। এ ছাড়াও পাথর লোডিং এলাকায় এসকাভেটর, জেনারেটরসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়। ২০১৫ সালে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে রজ্জুপথের ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের হাওর এলাকায় ৪১/৪২নং খুঁটির মাঝখানে রজ্জুপথের কেবল ছিঁড়ে গেলে পাথর পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে। সর্বশেষ একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ৪৩নং খুঁটির ফাউন্ডেশনসহ খুঁটি উপড়ে হাওরের পানিতে পড়ে পাথর পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোলাগঞ্জের অনেকেই প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, কোয়ারি এলাকায় পাথরখেকোদের অত্যাচার ও গোড়া থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করায় একটি খুঁটি প্রায় ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রজ্জুপথ অরক্ষিত থাকায় খুঁটিগুলোর সাপোর্ট ও লোহার তৈরি অ্যাঙ্গেল নিয়মিত চুরি হচ্ছে। এতে এটি এখন ধ্বংসের পথে। আনসার বাহিনী থাকলেও দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ এলাকায় রেলওয়ের জমিতে বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলন বিষয়ে বাঙ্কার এলাকার নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নূর মোহম্মদ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা এখানে পাথর ব্যবসায় জড়িত। আমাদের স্থায়ী জনবল সংকট ও নৌকা না থাকায় বোমা মেশিন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও পাথরখেকো চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল জোনের উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, রজ্জুপথ এখন বন্ধ। এটি ভাড়া নেওয়ার জন্য প্রাইম গ্রুপ লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। পরে এটি হয়তো দরপত্রের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হতে পারে। ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, একমাত্র রজ্জুপথটি দীঘদিন ধরে বন্ধ। পুনরায় এটি কীভাবে চালু করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist