জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ২৭ মে, ২০১৮

এনজিওর তেলেসমাতি কারবার

২০ টাকায় সব রোগের চিকিৎসা!

স্বল্প শিক্ষিত নারীদের মাধ্যমে ২০ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ২১ ধরনের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। স্বল্প শিক্ষিত এসব সেবিকার দেওয়া ওষুধপত্রে মুক্তি মেলে মানবদেহ ও গবাদি পশু-পাখির সব রোগ। গ্রামীণ সহজ-সরল মানুষদের ভুলভাল বুঝিয়ে এভাবে রইচ উদ্দিন আকন্দ হাসপাতালের নাম ভাঙিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে লালমনিরহাটের আদিতমারীর তালুক দুলালী গ্রামের ‘পল্লী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি এনজিও।

স্থায়ী রেজিস্ট্রার্ড কোনো চিকিৎসক বা আবাসিক রোগী না থাকলেও এসএসসি পাস স্বাস্থ্য সেবিকারা গ্রামীণ মানুষের সব প্রকার রোগের চিকিৎসাপত্র দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে। হোমিওপ্যাথিক এ চিকিৎসার একেকটি শিশি (বোতল) ২০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।

এ হসপিটালের এসএসসি পাস একজন সেবিকা সুমাইয়া বেগম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পড়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ১২৫ টাকা বেতনে নিজ গ্রামে সেবিকা হিসেবে সেবা দিতে এ চাকরি করছেন তিনি। এ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লোকমান আলী একটি ব্যাগে কিছু ওষুধ ও তার সেবনবিধি এবং রোগের নামসংবলিত একটি কাগজ হাতে ধরিয়ে দেন। ওষুধের প্রতিটি শিশি ২০ টাকা মূল্যে বিক্রি করতে হবে। নিজ গ্রামের মা, চাচি, ভাই, বোন আর খালাদের হাতে ওষুধ তুলে দিয়ে অর্থ প্রতিষ্ঠানের অফিসে জমা দেন। এভাবে দুই মাস কেটে গেলেও বেতনভাতা কোনোটাই পাননি তিনি। উল্টো টার্গেট পূরণ না করায় চাকরি হারানোর হুমকি পেতে হচ্ছে তাকে। অবশেষে সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে প্রতিটি শিশি বিক্রির ২০ টাকার মধ্যে ৮ টাকা সেবিকার, ৭ টাকা প্রতিষ্ঠানের এবং ৫ টাকা রইচ উদ্দিন আকন্দ হাসপাতাল বা কোম্পানি পাবে। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি এবং চাকরির বয়স দুই মাস হলেও একটি টাকা বেতন পাননি বলে দাবি করেন এ সেবিকা।

সরেজমিন জানা যায়, হাসপাতালের ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সব বয়সের মানুষদের কার কী রোগ জানার চেষ্টা করা এবং তার ওষুধ বিক্রি করাই তাদের কাজ। মানবদেহের সব রোগের সঙ্গে বাড়ির গবাদি পশু-পাখির সব সমস্যার ওষুধও বিক্রি করেন সুমাইয়ার মতো কালীগঞ্জ ও আদিতমারী দুই উপজেলার ৪২ জন সেবিকা। মানবদেহের ত্বকের ব্রন-মেছতা থেকে শুরু করে আলসার, অর্শ্ব, যৌন, মহিলাদের যাবতীয় গোপন ও জটিল রোগের চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন এসব সেবিকা। বাদ পড়েনি লিভার, ফুসফুস, মূত্রথলি, জরায়ু, মস্তিষ্ক ও চক্ষুর মতো মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের চিকিৎসা। অস্ত্রোপচার ছাড়াই যেকোনো জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা।

ভেলাবাড়ি এলাকার নেয়ামত উদ্দিন, কমলাবাড়ি এলাকার রফিজ উদ্দিন জানান, ওষুধের শিশি কিনেছেন কিন্তু কোনো উপকার পাননি। এটা গ্রামীণ সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।

গতকাল শনিবার পল্লী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সুলতান মাহমুদ নামে একজন ম্যানেজার সেবিকাদের বিক্রীত ওষুধের টাকা নিচ্ছেন এবং আগামী দিনের জন্য ওষুধ তুলে দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জনের লিখিত অনুমতিপত্র থাকলে ওষুধ সংরক্ষণ, বিপণন ও চিকিৎসা দেওয়ার লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। লালমনিরহাট সিভিল ডা. কাসেম আলী স্বাক্ষরিত একটি কাগজে দেখা গেল গ্রামীণ দুস্থ ও হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে হোমিও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ৬ মাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতি মাসে কার্যক্রমের অগ্রগতি স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মাধ্যমে সিভিল সার্জনকে অবগত করতে হবে।

পল্লী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক লোকমান আলী জানান, ওষুধের বিপরীতে ২০ টাকা গ্রামীণ মানুষদের জন্য কোনো ব্যাপার না। বাড়িতে ওষুধটা পৌঁছানো হচ্ছে, তাই সার্ভিসচার্জ হিসাবে এটা নেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই, চার্টে রোগের নামের সঙ্গে ওষুধের নাম ও সেবনবিধি লেখা আছে, সেটা দেখে সেবিকারা ওষুধ বিক্রি করছেন। এটাকে মানবসেবা বলে দাবি করেন তিনি। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নবিউর রহমান জানান, গবাদিপশু ও মানুষের চিকিৎসা একসঙ্গে হতেই পারে না। বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় দোহাই দিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist