ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
ইতালিতে নিহত স্বপনের লাশ আসছে কাল
‘আমার স্বপন তো আর ফোন দিল না’
‘রাত সাড়ে ৯টায় দিকে বাবার (স্বপন) সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন বাইরে বৃষ্টি ছিল, তাই ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছিল না। আমার বাবা বলেÑ মা, কাল সকালে ফোন দিব। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, এরপর কতদিন কেঁটে গেল আমার বাবা তো আর ফোন দিলো না। আমি এখনো অপেক্ষায় থাকি, আমার বাবা ফোন দিব। ও এভাবে চলে যেতে পারে না। তোমরা আমার সোনাটাকে এনে দাও।’ স্বপনের মরদেহ দেশে আসার কথা শুনের কান্নাজনিত কণ্ঠে এই কথাই বলছিলেন নিহত স্বপনের মা সালমা বেগম। গত ২৬ এপ্রিল সর্বশেষ স্বপনের সঙ্গে কথা হয় তার।
ইতালির বাণিজ্যিক নগরী মিলান সেন্ট্রাল স্টেশন সংলগ্ন সেত্তেমবিরিনি নামক রাস্তায় গত ২৭ এপ্রিল মরক্কোর ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাত নিহত হয় বাংলাদেশি যুবক শামসুল হক স্বপন। এ ঘটনায় মরক্কোর ২ নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহত স্বপন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখালীর আবদুল সালামের বড় ছেলে।
আজ ভোরে তুর্কি এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে মিলানোর মালপেনছা বিমানবন্দরে থেকে তার লাশ বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার ভোরে মরদেহটি বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে জানান নিহতের পরিবার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইতালির স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় মিলান ভিয়া পোনছিও মর্গ প্রাঙ্গণে স্বপনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইতালির বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেল মিলানোর কনসাল (শ্রম) মো. রফিকুল করিমের বরাত দিয়ে স্বপনের চাচা স্কুল শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ জানান, কন্স্যুলেটের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। যেহেতু এটা একটা হত্যাকা-, তাই ইতালির পুলিশ তদন্ত করে নিয়ম মেনেই লাশ হস্তান্তর করছে। আগামীকাল রোববার সকালে লাশ বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ইতালিতে স্বপনের জানাজায় অংশ নেন মিলানোর সামাজিক, রাজনৈতিক, মিলান বাংলা প্রেস ক্লাব সাংবাদিকসহ সাধারণ প্রবাসীরা। এর আগে মিলান শহরে স্বপনের হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা।
এদিকে স্বপনের মরদেহে আসার অপেক্ষায় তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। গতকাল স্বপনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের শোকে কাতর বাবা-মা। তারা এখনো মেনে নিতে পারছেন না আদরের ছেলে এই অকাল মৃত্যু। তারা এখনো বিশ্বাস করেন, তাদের ছেলে তাদের কাছে ফিরে আসবে। স্বামীর মৃত্যুর খবরে স্বপনের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে এখন বাবা বাড়িতে অবস্থান করছেন। বছরখানেক আগে বিয়ে হয়েছিল তাদের। স্বপনের বাবা আবদুল সালাম জানান, পাঁচ ছেলের মধ্যে স্বপনই সবার বড়। সে পরিবারের হাল ধরায় প্রবাস থেকে পাকাপাকিভাবে দেশে ফিরেছেন তিনি। এখনো খানিকটা ঋণের তলে আছে তার পরিবার। তারপরও একপাশ থেকে আগলে রেখে ছোটভাইদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন স্বপন। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার আগেই এই দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন।
স্বপনের প্রতিবেশীরা জানান, স্থ’ানীভাবে অত্যন্ত স্বজ্জন, মিশুক, পরোপকারি যুবক স্বপন ২০০৯ সালে প্রথমে ইংল্যান্ড, পরে ইতালিতে প্রত্যাবর্তন করে রেস্টুরেন্টে কাজ করছিলেন।
"