গিয়াস উদ্দিন রনি, কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী)
বেহাল সড়ক নিয়ে দুর্ভোগে ‘চর বালুয়াবাসী’
সীমানা জটিলতার কারণে ২০ হাজার মানুষ উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল উন্নয়নের বাইরে।
এক সড়কের জনপদ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘চর বালুয়া’। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের ২০ হাজার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের পথ এটি। চার রাস্তার মাথা নামক ঘাট থেকে শুরু হওয়া এ সড়কটির এক তৃতীয়াংশই কাঁচা। এক অংশ সলিং। আর এ সড়কের বেশিরভাগ অংশ খানাখন্দে ভরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, মেঘনা ও বামনিয়া নদীর সংযোগস্থলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর বালুয়া। শত বছরের ভাঙা-গড়ার এ জনপদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড। এখানে ২০ হাজারের বেশি মানুষের বাস। কিন্তু দ্বীপের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র প্রধান সড়ক এটি। কাঁচা আর সলিং মিশ্রিত এ সড়কটিও খানাখন্দে ভরে গেছে। এ সড়কটি ধরে প্রশাসনিক, চিকিৎসা ও অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় কাজে এ দ্বীপের মানুষকে যেতে হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে। দ্বীপ থেকে উপজেলার সদরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভূখন্ড থেকে চর লেঙটা ঘাট হয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের নদী পথ পাড়ি দিয়ে চর বালুয়ায় যেতে হয়। জোয়ার কম থাকলে নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাত্রীদের মূল ঘাট থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার আগেই নামিয়ে দেয়। আর তখন ওই দুই কিলোমিটার কাদামাটি হেঁটেই পাড়ি দিতে হয়। আবার মূল ঘাটে নামিয়ে দেওয়ার পরও সরাসরি সড়ক নেই। খেতের আইল দিয়ে হেঁটে কিংবা মোটরসাইকেল চড়ে কিছুদূর গিয়ে উঠতে হয় প্রধান সড়কে। প্রধান সড়কে উঠার পর গাড়ি চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ এখানে-ওখানে ভাঙাচোরা, খানাখন্দ। এভাবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয় জনতা বাজার। স্থানীয়দের দাবি, শুধু সীমানা জটিলতার কারণে ২০ হাজার মানুষ উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল উন্নয়নের বাইরে।
আবুল হোসেন নামের এক বাসিন্দা জানান, এ জনপদের মানুষের জন্য মাত্র একটি সড়ক। এখানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র যান হচ্ছে মোটরবাইক। বর্ষায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বর্ষায় এ সড়কে মোটরবাইকও চলাচল করে না। কাদাময় সড়কে হেঁটে যাতায়াত করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় হাফেজ নাজিম উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী নিপু আক্তার বলে, তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে হেঁটে আসতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। শুকনো মৌসুমে খেতের আইল-কান্দি হয়ে হেঁটে তাকে প্রধান সড়কে উঠতে হয়। শুধু বাড়ি থেকে বিভিন্ন খেতের আইল-কান্দি মাড়াতেই সময় লাগে ৪০ মিনিট। তার পর প্রধান সড়ক হয়ে হেঁটে আসতে আরো ২০ মিনিট সময় লাগে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম আক্ষেপ করে বলেন, এখানকার মানুষ সকল নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। এ ছাড়া এ দ্বীপ থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার কাঁকড়া যাচ্ছে দেশ ও দেশের বাইরে। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দারা সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে ইতোমধ্যে প্রধান সড়কের কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে বলেও জানান এ ইউপি সদস্য।
জানতে চাইলে চর এলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, সত্যিই এ দ্বীপের মানুষ শতভাগ অবহেলিত। সড়ক-ব্যবস্থাসহ দ্বীপের উন্নয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এলাকাটি সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিজ নির্বাচনি এলাকা। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এ দ্বীপের সড়ক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ হাতে নেবেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সন্দ্বীপের সঙ্গে সীমানা জটিলতা থাকায় উন্নয়ন কাজে বেগ পেতে হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামিরুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, চর বালুয়া একদমই বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। এখানকার মানুষ সত্যিই অবহেলিত। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সঙ্গে সীমানা বিরোধ থাকায় দুই জেলার কোথাও থেকে এখানে তেমন উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো সড়ক উন্নয়ন করার সুযোগ নেই। তারপরও আমাদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে দুটি মাটির সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান সড়কে চর উন্নয়ন বসতি স্থাপন প্রকল্পও (সিডিএসপি) মাটির কিছু কাজ করছে।
"