সুনামগঞ্জ ও ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

  ২২ মে, ২০১৮

ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য

টাকার প্রয়োজন মেটাতে ধান বিক্রি করে অর্ধেক মূল্যও পাচ্ছে না সুনামগঞ্জের কৃষক। রোদের অভাবে বোরো ধানের সোনালি রং নষ্ট হয়ে কালচে হয়ে যাওয়ায় খরিদদাররা ধান কিনছেন না। ফলে প্রতিটি উপজেলার ঋণগ্রস্ত কৃষক পড়েছে বেকায়দায়। ধান বিক্রি করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়িতে ধান ফেরত নিতে হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু করার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। তাদের দাবি, মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের বাইরে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে এই ধান কিনতে হবে।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার হাওরাঞ্চলের মধ্যনগর থানা বোরো ফসলের বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। দেশের সুপরিচিত ধানের মোকামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খরিদদাররা মধ্যনগর বাজারে এসে স্থানীয় আড়ৎদারদের মাধ্যমে ধান কিনে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছেন জেলার কৃষক। রোদের অভাবে বোরো ধানের সোনালি রং নষ্ট হয়ে গেছে। খরিদদারও কালো রঙের ধান খরিদ করছে না। এতে অনেক কৃষক ধান বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। ফেরত নেওয়ার কারণে যাতায়াত বাবদ তাদের লোকসান হচ্ছে। কৃষকদের ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। গত বছরে মহাজনি ঋণ ও সুদের টাকা মাথায় নিয়ে এ বছর আবারও নতুন ঋণ নিয়ে হাওরে জমিতে চাষাবাদ করেন। ভালো ফসলের মুখ দেখে কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টি সেই স্বপ্ন ভেঙে দিল।

তাহিরপুর উপজেলা শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের মানিক কিলা গ্রামের আবুল হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান বিক্রির জন্য আড়ৎদার গোলাপ সরকারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। পরের দিন প্রায় ১০০ মণ ধান বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসলে ওই আড়ৎদার নিম্নমানের ধান বলে ফেরত দেন। সেই ধান বাজারে বিভিন্ন আড়ৎদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনো আড়ৎদারই খরিদ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। একইভাবে ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক ধীরু তালুকদার বলেন, এ রকম অনেক কৃষকই ধান বিক্রি করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

মধ্যনগর বাজারের সার ব্যবসায়ী মুহিত কান্তি দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সরকারের উচিত কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধানে কিছুটা কালো রং হওয়ায় আড়ৎদাররা ধান ক্রয় করতে অনিহা প্রকাশ করায় কৃষকরা ধান বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। এখন সরকারের উচিত সরকারি গোডাউনে ধান সংগ্রহ অভিযানে খুব দ্রুত শুরু করা। কৃষকরা যাতে ধান স্বাচ্ছন্দে সরাসরি গোডাউনে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করে ঋণগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা কারা উচিত।

ধর্মপাশা উপজেলার ৪নং মধ্যনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার তালুকদার বলেন, আড়ৎদাররা ও ফড়িয়াদি ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আসায় কিছু ব্যবসায়ী কৌশল অবলম্বল করেছে। তারা ধানে সোনালি রং নেই, কালো রং এবং নি¤œমানের ধান বলে উপযুক্ত মূল্য না দিয়ে অর্ধেক মূল্য দিতে চাচ্ছেন। ফলে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তারা যাতে দালাল ছাড়াই সরাসরি সরকারি গোডাউনে ধান দিতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক যদি নিজ উদ্যোগে এর তদারকি করেন তাহলে কৃষক উপকৃত হবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি জানান, ধোবাউড়ায় বোরোর ফলন ভালো হলেও হতাশায় কৃষক। ধানের খরচ তুলতে গিয়ে সস্তায় ধান বিক্রি করছেন তারা। মৌসুম শেষ হয়ে এলেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে মহাজনদের গোলায়। এখনো ধোবাউড়ায় সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটা প্রায় ৮০ ভাগ শেষ। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় সার, বীজ, কীটনাশকের ব্যয়ের খরচ তুলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। ধোবাউড়া সদরসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মণ ধান সর্বোচ্চ ৫০০ শত টাকা বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই দামে ধান বিক্রি করলে খরচের টাকাও পাওয়া যাবে না। বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে ব্যবসায়ীরা ওজনে অতিরিক্ত ধান নিয়ে যান। ৪০ কেজির স্থলে ব্যবসায়ীরা ৪৫ কেজি নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অধিদফতর বলছে, সরকারিভাবে ধান ক্রয় কোনো উদ্যোগ ধোবাউড়ায় নেই, তবে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কারচুপির বিষয়টি তারা দেখবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist