আব্দুল কাইয়ূম, সুনামগঞ্জ
প্রখর রোদে হাওরাঞ্চলে স্বস্তি ধান শুকানোয় ব্যস্ত কৃষক
প্রখর রোদে স্বস্তি মিলেছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। প্রতিটি খলায় পুরোদমে চলছে ধান শুকানোর কাজ। গত দুই দিন ধরে প্রখর রোদে ব্যস্ত সময় পার করছে হাওর পাড়ের কৃষকরা। শ্রমিক সংকটের কারণে এতে যুক্ত হয়েছেন কৃষকের স্কুল-কলেজপড়–য়া সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। মার্চে প্রথম দিক থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতে গত এক মাস ঠিক মতো রোদ না থাকায় ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারেনি তারা। বৃষ্টিতে কাটা ফসলও মাঠতে আনতে না পারায় ধানে চারা গজিয়ে উঠে। এ অবস্থা জেলার তাহিরপুর জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর, জগন্নাথপুরসহ ১১টি উপজেলায়।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার আবাদ জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪ শত ৪৭ হেক্টর। এবার ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪১৪ টন ধান। যার মূল্য ২ হাজার ৯২৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। হাওরের কৃষকরা জানান, পরপর গত দুই বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অকাল বন্যায় জেলার সবগুলো হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগে এবার মাসাধিক সময় জুড়ে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট। বৃষ্টি আর বজ্রপাতের কারণে কাটা ধান জমি থেকে খলায় তুলতে পারেননি। এবার শুষ্ক অবস্থা তৈরি হওয়ায় দ্রুত ধান মাড়ার ও শুকিয়ে গোলায় তুলতে পারলেই স্বস্তি।
তাহিরপুর উপজেলার শামুয়েল, মো. ইসহাক মিয়া, কামরুল, সফিকুল হাবিবুরসহ একাধিক কৃষক বলেন, আমাদের এখানে বাইরের জেলা থেকে বেপারী (ধান কাটার শ্রমিক) আসত। এখন তারা আসে না, মূলত এ কারণে আমাদের জেলায় শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। আর তা না হলে অনেক আগেই ধান কাটা শেষ হয়ে যেত। গত দুই বছরে পানিতে নিয়ে গেছে ধান। এবার ঝড় বৃষ্টিতে নাজেহাল কৃষক। প্রায় এক মাস পর রোদ উঠায় সবাই এখন ধান শুকাতে ব্যস্ত। পাশাপাশি গো-খাদ্য খড় জোগাড় করা সহজ হবে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্ণেন্দু দেব বলেন, দীর্ঘদিন পর রোদ ওঠায় উপজেলা বিভিন্ন হাওরের কৃষকরা এক সপ্তাহের কাটা-মারাই এগিয়েছে। আমি নিজেও কৃষকদের আনন্দ দেখার জন্য বিভিন্ন খলাতে ঘুরে দেখেছি। একই কথা বলেন তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কমরুল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা জানান, কৃষক এবার হাওরের পাকা ধান নিয়ে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে খুবই কষ্টের মধ্যে ছিল।
জমি থেকে ধান কেটে খলায় এনে রেখেছে কিন্তু, রোদ না থাকায় শুকাতে পারেনি। হাওরে প্রায় ৯০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে সব ধান কাটা মাড়াই ও শুকানোর কাজ শেষ হবে।
"