শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে লাউয়াছড়া বনের গাছ : সক্রিয় ৪-৫টি গ্রুপ
মৌলভীবাজারের জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গাছ চোর চক্র। বনবিভাগের তৎপরতার অভাবে এসব মূল্যবান গাছ চুরি বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় খাসিয়ারা। আর এসব চুরিতে জড়িত অস্ত্রধারী আনসার গ্রুপসহ ৪-৫ টি গ্রুপ।
বন বিভাগের হিসেব মতে, এক মাসে তিনটি বৃহদাকার সেগুন গাছ ও একটি আগর গাছ কেটে পাচার করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় খাসিয়াদের হিসেবে চুরি হওয়া গাছের আরো বেশি। অভিযোগ উঠেছে, লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের মদদে গাছ চোরদের একাধিক চক্র আগের মতো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে জাতীয় এই উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লোকবলের অভাবকে দায়ী করেন।
সরেজমিনে লাউয়াছড়া বন ও স্থানীয় খাসিয়াপুঞ্জি ঘুরে জানা যায়, এক মাসের ব্যবধানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাড়িভাঙা ও লাউয়াছড়া বিট অফিসের এলাকা থেকে বেশ কিছু পুরনো সেগুন গাছ কেটে পাচারের ঘটনা ঘটে। ওই স্থানে কাটা গাছের মোথা দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয় স্থানীয়রা। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে লাউয়াছড়া উদ্যানের পার্শ্ববর্তী কালাছড়া ও বাঘমারা বিটের বাফার বাগানে আকাশমনিসহ ৬-৭টি মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেছে চোরচক্র। বন কর্মকর্তারা বলেছেন, চোরচক্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অস্ত্রধারী আনসার, রোমন ও সেলিম গ্রুপসহ ৪-৫ টি গ্রুপ। সর্বশেষ গত শনিবার রাত আড়াইটায় লাউয়াছড়া পুঞ্জি সংলগ্ন মাঠে আগর গাছ পাচারের উদ্দেশে কেটে খন্ডাংশ করে গাছ চোর দল। খাসিয়াপুঞ্জির লোকজন বাধা দিলে সশস্ত্র চোরদলের সঙ্গে তাদের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুঞ্জির খাসিয়া চৌকিদাররা গাছের খন্ডাংশ উদ্ধার করে বিট অফিসে জমা দেয়। এ ঘটনায় পুঞ্জির লোকজন লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বিট কর্মকর্তা কর্ণপাতই করেননি বলে অভিযোগ করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয়রা একাধিক ব্যক্তি জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নতুন পুরনো মিলে বেশ কিছু গাছ চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে চক্রগুলো সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় থাকে। বর্তমানে আগে যারা গাছ কাটত তারাই আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সঙ্গে নতুন দুটি চক্রটিও মাঠে সক্রিয় রয়েছে। গাছকাটায় জড়িতরা এরই মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া, ছনখলা’র সেগুন বাগানে ও সিএমসি অফিসের পাশের টিলায় সেগুন ও গামারী গাছের বাগানের মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেছে। খাসিয়ারা অভিযোগ করেন, বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন অজ্ঞাত কারণে এসব গাছ চোর চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তার উদাসীনতার কারণে এই উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
এ নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় বিট কর্মকর্তার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন ‘লাউয়াছড়ায় চাকরি করে কিভাবে ভালো থাকি বলেন। আমার বিরুদ্ধে খাসিয়াদের এসব অভিযোগ মিথ্যা, অহেতুক ও বানোয়াট।’ তিনি আরো বলেন, ‘চারজন প্রহরী, একজন মালি ও দুইজন বুটম্যান নিয়ে সশস্ত্র গাছ চোর ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বিট কর্মকর্তার দাবি, খাসিয়ারা আগে রাতে জিপ, অটোরিকশা ও প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে তাদের বাসায় যাওয়া আসা করত। বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ও নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়ি নিয়ে তাদের চলাচল বন্ধ করায় আমাকে তারা অহেতুক দোষারোপ করছে।’
কারা বনের এসব গাছ কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আনসার, রোমন ও সেলিম গ্রুপসহ ৪-৫ টি গ্রুপ বনের গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত।’ আনসার গ্রুপের প্রধান কাটাবিল এলাকার আনসার আলী। এই আনসার গ্রুপ সন্ধ্যার পর ও রাতের বেলায় গাছ চুরি করতে বনে প্রবেশ করে। তার বিরুদ্ধে ৬-৭টি এবং অন্যদেব বিরুদ্ধে ৩-৪টি করে মামলা রয়েছে।
"