রাজীবুল হাসান শ্রীপুর (গাজীপুর)
বাড়ির ছোট্ট ঘরটি ‘বাবার বৃদ্ধাশ্রম’
বাড়িতে পচিশটি ঘর। পাশাপাশি বড় একটি সুসজ্জিত ঘরে থাকে একমাত্র ছেলে আর ছেলের বউ। বাড়ি করার সময় যে ছোট্ট খুপড়ি ঘরটি পরিতক্ত মালামাল রাখার জন্যে তৈরি করা হয়েছিল সেখানে থাকতে হচ্ছে বৃদ্ধ বাবা শুক্কুর আলীকে(৮০)। ৫ ফিট দৈর্ঘ্য আর ৩ ফিট প্রস্থের এই ঘরটিতে একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে। বিছানা ভিজে যায়। একমাত্র সন্তান আনোয়ার হোসেন বলছে বাবার বয়স হয়েছে। কারো কথা শোনে না। ঘরের ভেতরেই প্রসাব-পায়খানা করে। তাই ওনারে বাইরের ঘরে রাখছি। ঘটনা এখানেই শেষ নয় গত শনিবার পুত্রবধূর কাছে দ্বিতীয়বার দুপুরের খাবার খেতে চাওয়ার অপরাধে ছেলের বউ শামছুন্নাহার উচ্চ স্বরে বলতে শুরু করে-‘জমিজিরাত সব বেইচ্চা খায়ছুন, একটু পরে পরে খাউন চাইন। বৈড়া অইছোন অ্যাল্লা একটু ভালা অইন।’ এর পর বৃদ্ধ বাবা শুক্কুর আলী এলাকার মানুষ ডাকতে শুরু করে। এ ঘটনার এক পর্যায়ে ছেলের স্ত্রী শামছুন্নাহার তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে আহত হলে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনাটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার চেয়্যানবাড়ি মোড় এলাকায়।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন বৃদ্ধের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আহত শুক্কুর আলী মাথায় ৬টি সেলাই নিয়ে বিছানায় শোয়ে কাতরাচ্ছেন। চোখে পানি। পুরো বাড়িতে ভাড়াটে ছাড়া কোনো লোক নেয়। সেখানে ইট বিছানো ফ্লোরে ময়লাযুক্ত একটি তোষক পাতা। জানালা-দরজা নেই। এমনই এক ঘরে তাকে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বসবাস করতে হয়। অথচ পুরো বাড়ির মালিক শুক্কুর আলী নিজেই। তার এক ছেলে আনোয়ার হোসেন ও অপর দুই মেয়ে মুর্শিদা ও মুসলিমা। দুজনকেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধের স্ত্রী অনেক আগে থেকেই মুর্শিদার কাছে থাকছেন।
এলাকাবাসী আকবর আলী বলেন,‘ ঘটনার পরেই আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্র্তি করতে সহযোগিতা করেছি। এলাকায় বসে ওই মহিলার বিচার করা হবে বলেও তিনি জানান।
আহত বৃদ্ধ শুক্কুর আলী বলেন, ‘একমাত্র ছেলে কৌশলে আমার সব জমিজমা লিখে নিয়েছে। তার দুই বোনকে কোন জমিজমা দেয়নি। ছেলে ব্যবসা করে। সেখানে গিয়ে ঔষধ চাইলে মানুষের সামনে আমাকে অপমান করে। খাবার দেয় না ঠিক মতো। আমি একটা ছোট ঘরে থাকি, তারা থাকে বড় ঘরে। তাদের ঘরে পানি পড়ে না, কিন্তু আমার ঘরে পানি পড়ে। ঝড় হলে বিছানা ভিজে যায়। তিনি বলেন, গত শনিবার খাবার নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছেলের স্ত্রী তাকে মারপিট করে। লাঠির একটি আঘাত সে আহত হন।
তিনি আরও বলেন,‘আমার সম্পত্তিতে আমি নিজেই অসহায়ের মতো পড়ে থাকি। আমার কোন খোঁজ নেয় না ছেলে। আমার ছেলের সাথে জমি নিয়ে কথা তুললেই সে আমার সাথে দূর্ব্যবহার করে। এ ঘটনার পর থেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত ছেলের বউ শামছুন্নাহার।
শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার হুজাতুল ইসলাম পলাশ বলেন,‘মাথার বামদিকে আঘাত রয়েছে। চারটি সেলাই করা হয়েছে। ওই বৃদ্ধার নান জামাই এসে আজ দুপুরে তাকে নিয়ে গেছে।’ শ্রীপুর থানার এসআই মোহসিন বলেন,‘এ ঘটনার খবর পেয়েই ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কোনো অভিযোগ না থাকায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
"