রাজু খান, ঝালকাঠি
স্বাস্থ্য সেবা
শয্যা, ওষুধ কিছুই নেই কীর্ত্তিপাশা হাসপাতালে : দুর্ভোগ চরমে
ঝালকাঠিতে কীর্ত্তিপাশার ১০ শয্যার হাসপাতালে চলছে শয্যা ছাড়াই। বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন শতাধিক রোগী। হাসপাতালটির অবস্থানগত কারণে এখানে পার্শবর্তী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের রোগীরাও চিকিৎসা নিতে আসছে। কিন্তু পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ নেই। জটিল রোগের কোন ঔষধই এখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়না। তাই দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা ঔষধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ১০ শয্যার সরকারি হাসপাতালটি চালু হয়ে ছিল। ১৯৮৪ সলের দিকে সরকারিভাবে এই হাসপাতালের খাবার বরাদ্দ বন্ধ হলে শয্যা চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এটির পুরাতন ভবন থাকলেও নেই শয্যা ও চিকিৎসার সরঞ্জাম।
গতকাল শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে যায় দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের পিছনের দিকে ৩টি রুমে সপরিবারে বাস করছেন। এখানকার বাসিন্দা নুরজাহান বেগম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমার স্বামী মো. আফজাল হোসেন ঝালকাঠি সিভিল সার্জন অফিসের পরিছন্নকর্মী তাই সিভিল সার্জন আমাদের এখানে থাকতে বলছেন।’ হাসপাতালটির আশেপাশের ২০টি গ্রামের মানুষ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। রোগীর তুলনায় নেই পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ। ডাক্তার না এলে স্বাস্থ্য সহকারী ও নার্স চিকিৎসা দিয়ে থাকে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের। এ হাসপাতালে পদায়নকৃত চিকিৎসক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান ঝালকাঠি সদর হাসাপাতালে সংযুক্ত দায়িত্বে থাকায় সেখোনেই তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এখানে রোগীদের একমাত্র ভরসা স্বাস্থ্য সহকারী ও নার্সরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে কথা হয় এক রোগীর অভিভাবক সালেহা বেগমের সাথে। তিনি জানান, বাচ্চার চোখ থেকে পানি পড়ে। তাই এখানে এসে ৩ টাকার টিকেট দিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। সিরাপ ও ড্রপ দিয়েছে। অপর অভিভাবক রিনা বেপারী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ৩ টাকার টিকেট দিয়ে বাচ্চার পেট ব্যথার ঔষধ নিয়েছি। সুখরঞ্জন বেপারী নামে আরেক রোগী বলেন, এখানে জটিল রোগের ঔষধ দেওয়া হলে আমরা উপকৃত হতাম। পারুল বেগম নামে আরেকজন বলেন, এ হাসপাতালে এলেই দামি ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়, তারা বলে এখানে এসব ঔষধ নাই। রোগী দিলিপ বলেন, ‘এখানে আইলে শুধু জ্বর, পাতলা পায়খানা ও কিরমীর ঔষধ দেয়।’ কৃত্তিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিমুল সুলতানা হ্যাপি সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালটির শয্যা চালু করে আধুনিকায়নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জটিল রোগের ঔষধ বরাদ্দ দেওয়া হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে।
নাম প্রকাশ না করে কর্তব্যরত এক নার্স প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এখানে জটিল রোগের ঔষধ দিলে আমরা রোগীকে ভাল চিকিৎসা দিতে পারতাম। তবে যা বরাদ্দ পাই তা দিয়েই ভাল সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।’ তার পাশে থাকা অপর নার্স জানান, অনেক সময় রোগী এলে মেডিকেলে অফিসার না থাকায় আমাদেরই ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। কারণ তা না হলে দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পার্থ সারথী দাস জানান, এখানে প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তবে এখানে সকল রোগের রোগীকে ঔষধ দিতে পারিনা, কারণ আমাদের সকল ঔষধ সরবরাহ নেই। তাই কিছু ঔষধ রোগীকে বাহির থেকে কিনে নিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রেসার, ডায়াবেটিক ও এন্টিবায়েটিক ঔষধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া শিশুদের নিউমনিয়া রোগের ঔষধ দিতে পারছিনা। এই প্রসঙ্গে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডাক্তার শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এখানে শয্যা, খাবার এবং ঔষধ অচিরেই চালু হবে। এ পরিকল্পনা আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অচিরেই এটিকে আধুনিক হাসপাতালে রুপান্তরিত করা হবে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস মিলেছে। ১০ শয্যা চালু হলে পর্যাপ্ত ঔষধ বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
"