সুমন কর্মকার, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
বিলুপ্তির পথে ফকিরহাটের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের ফকিরহাটের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে মৃৎশিল্প। উপজেলার পালপাড়া যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালি ছবি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। যা সহজেই যে কারোর মনকে পুলকিত করে। এক সময় উপজেলার গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্পসামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিস পত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার পাড়াগাঁয় এখন আর মাটির হাঁড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও ফকিরহাটের মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলার মৃৎশিল্পী বিমল পাল, সুখেন্দু পাল, অরবিন্দ পাল এ প্রতিবেদককে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারা আরো বলেন আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রশিক্ষিত করে মৃৎশিল্পের সময়োপযোগী জিনিসপত্র তৈরিতে এবং বিদেশে এ পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
"