রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ২৭ এপ্রিল, ২০১৮

রড-সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি

কুষ্টিয়ায় ভাটা পড়েছে আবাসন শিল্পে নির্মাণ শ্রমিকদের মানবেতর জীবন

কর্মব্যস্ত নাগারিক জীবনে আবাসন যোগানে কুষ্টিয়াতেও গড়ে উঠেছে আবাসন ব্যবসায়ীদের বিল্ডার্স কোম্পানী। এদের হাত ধরে গত এক দশকে কুষ্টিয়া শহরের ছোট-বড় প্রায় ৬০টি বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। অন্তত আড়াই হাজার পরিবারের আবাসন সংস্থান হয়েছে সেখানে। এ খাত তৈরি করেছে সব মিলিয়ে অন্তত ১৫ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের কর্মক্ষেত্র। সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর উর্ধ্বমূল্যের নেতিবাচক প্রভাবে বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। আবাসন ক্রেতাদের সাথে পূর্বের চুক্তি মতে নির্মাণ সম্পন্ন করতে লোকসানের বোঝা ভার বইতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বিল্ডার্স কোম্পানীগুলোর। অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ভাটা পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমিকরা। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সরকারি কাজেও প্রাক্কলন ব্যয় বৃদ্ধির কথা জানাচ্ছেন গণপূর্ত বিভাগ। জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাইজাল হোসেন বলেন, জেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ভবন নির্মাণ প্রকল্পগুলির চলমান কার্যক্রম এখন স্থবির। সম্প্রতি হঠাৎ করেই নির্মাণ সামগ্রীর উর্ধ্বমূখী মূল্যের প্রভাবে হিসেব মেলাতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। এই খাতে কর্মরত সব ধরনের শ্রমিক কমবেশি বেকার হয়ে পড়েছে। যা মোট শ্রমিকের প্রায় অর্ধেক। যারা আছেন তাদেরও শঙ্কা আছে বেকার হওয়ার। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়তে পারে জেলার প্রায় ৭ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ।

সদর উপজেলার বাধ-বাজার এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মাসুম আলী জানান, এমনিতেই মালিক পক্ষ সুযোগ পেলেই আমাদের ন্যায্য মজুরি থেকে ঠকান। তারপর আবার অধিকাংশ বিল্ডিং নির্মাণ এখন বন্ধ রেখেছে মালিকরা। দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে যে দুই-একটার কাজ চলছে সেখানে গিয়ে ভীড় করলেই মালিকরা কম মজুরী দিয়ে কাজ করানো সুযোগ নেয়। এভাবে বেশীদিন চললে বেঁচে থাকা জন্য আমাদের অন্য পথ দেখতে হবে। শহরের মজমপুরের রড ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত প্রধা উপাদান রড, সিমেন্ট, ইটসহ ধাতব জাতীয় সামগ্রীর আকাশচুম্বি মূল্যবৃদ্ধির ফলে শহরের অধিকাংশ বিল্ডিং এর কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদাররা। এমনও দিন যাচ্ছে সারাদিন আমাদের কেনাবেচা হচ্ছে না। দোকানের কর্মচারীদের বেতন মজুরী দিতে হচ্ছে নিজের কাছ থেকে। এছাড়া এসব ব্যবসায়ের সাথে জড়িত কুলিরাও সারাদিন পর খালি হাতে বাড়ি যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণসহ নানাবিধ ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

বিল্ডার্স ব্যবসায়ী ইকবাল হাসান খোকন বলেন, গত এক দশকে কুষ্টিয়া শহরের প্রানকেন্দ্রে অন্তত ৬০টি বহুতল ভবনের ২০ লাখ বর্গফুট আয়তনে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের আবাসন সংস্থান নির্মাণ করে ক্রেতাদের সাথে চুক্তি মতে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই সময়কালে এখাতে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ব্যবসায়ী লেনদেন হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত রড, সিমেন্ট, ইটসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ উপকরণের লাগামহীণ মূল্যবৃদ্ধির কারণে উন্নয়নের এই খাতটি স্থবির। বিল্ডার্স ব্যবসায়ীরা ভবন নির্মাণে হিসেব মেলাতে পারছেন না আবাসন ক্রেতাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ মূল্যে। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে এই সমস্যা সৃষ্টির সাথে জড়িত সিন্ডিকেট চক্রের লাগাম ধরতে সরকারের প্রতি আবেদন জানান তিনি। কুষ্টিয়া বিল্ডার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মতিন জানান, আবাসন ভবন বা যে কোন ধরণের ভবন নির্মাণ সামগ্রীর সিংহভাগ দখলকারী উপকরণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রড, সিমেন্ট, ইট, বালি-পাথর ছাড়াও প্রায় ২শ প্রকার নির্মাণ উপকরণের সমন্বয়ে একটি ভবন নির্মাণ শেষে তার আসল চেহারায় দৃশ্যত: হয়। তিনি আরো বলেন, ব্যস্ততম আধুনিক নাগরিক জীবনের আবাসন তৈরির ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত জেলাতে প্রায় ১৬টি বিল্ডার্স কোম্পানী। সামগ্রী মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে চলমান কাজ বন্ধ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এতে একদিকে চুক্তিবদ্ধ সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে না পেরে ক্রেতাদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে অন্যদিকে এখানে কর্মরত নির্মাণ, কাঠ, টাইলস, রং, স্যানেটারি, ইলেক্ট্রিকসহ নানা খাতের শ্রমিকরাও এখন বেকার হয়ে পড়ছে।

কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম শফিউল হান্নান জানান, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সরকারি খাতের অবকাঠামো নির্মাণে কোন বাধা না হলেও সামগ্রীকভাবে বেসরকারি খাতে এর সীমাহীন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির লাগাম ধরতে না পারলে আগামীতে সকল প্রকার সরকারি অবকাঠামো নির্মাণেও প্রাক্কলন ব্যয় বেড়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist