মহসীন শেখ, কক্সবাজার
কক্সবাজারের ১৫ স্পটে ছিনতাইকারীর উৎপাত
ছিনতাই বন্ধে স্থানীয়দের সহযোগিতা চাইল পুলিশ
পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ১৫ স্পটে তৎপর ছিনতাইকারীরা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান জোরদারের কথা বললেও ছিনতাই রোধ করতে পারছে না পুলিশ। তবে জনসাধারণকে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ জোরেসোরে কাজ করছে।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘কক্সবাজারের মতো একটি পর্যটন শহরে এখন শুধু রাত নয়; দিন-দুপুরেও ঘটছে ছিনতাই। এমনকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনেই একের পর এক ঘটছে ছিনতাই। এর ফলে আমরা শহরবাসী আতঙ্কিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’
স্থানীয়দের দাবি, পুরো শহরজুড়ে এখন ছিনতাইকারীর ভয় মানুষকে তাড়া করছে। রাত নামলেই এখন ছিনতাই নিয়ে তটস্থ থাকে মানুষ। এতে প্রয়োজনীয় কাজ থাকলেও রাত নামলেই আর বাইরে বের হতে চাচ্ছেন না অনেকে। এমনকি দিনের বেলায়ও নির্জন স্থানে ওঁৎপেতে রয়েছে ছিনকারীর দল। শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন বলেন, যেখানে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনেই ঘটছে ছিনতাই, সেখানে অন্য এলাকার কি অবস্থা একবার ভাবুন! এখন শহরজুড়ে ছিনতাইকারীর দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সব নির্জন স্থানে এখন ছিনতাকারীরা ওঁৎপেতে রয়েছে। এসব সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা হামলে পড়লে মানুষের উপর।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত শনিবার সকাল ৮টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের সড়কে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া সামিরা সুলতানা নামে এক কলেজ ছাত্রীকে ছুরি ঠেকিয়ে তার মোবাইল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী। গত ৪ এপ্রিল রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে শাহেদা হাসান নামের এক নারী ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, হাত ব্যাগ ও ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার সী-ইন পয়েন্ট, হোটেল সী-ওয়ার্ল্ড রোড, বাহারছড়ার জাম্বুর মোড়, সার্কিট হাউসের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের চত্বর, লালদীঘির পাড়ের বিহারি গলি, হাসপাতাল রোড, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, খুরুশকুল রোডের মাথা, বিজিবি ক্যাম্পের নারিকেল বাগান, শহরের সাবমেরিন ক্যাবল এলাকা, সিটি কলেজের সামনে, হাশেমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্ট, কলাতলীর প্রধান সড়কের টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনে, উত্তর ও দক্ষিণ আদর্শ গ্রামের সামনেসহ শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্টসহ ১৫টির বেশি স্পটে ছিনতাইকারীরা তৎপর। এই তালিকায় থাকা হাসপাতাল সড়কেই দিনদুপুরে সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, আলীরজাহাল কেন্দ্রিক একটি বড় ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এই চক্রের সবাই দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার। তারা বাসটার্মিনাল থেকে শহরের ঝাউতলা পর্যন্ত টমটমে করে চষে বেড়ায়। মূলত টমটমের (ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক) যাত্রীরাই তাদের প্রধান টার্গেট। এ চক্রটি সন্ধ্যার পর থেকে তৎপর হয়ে উঠে। ভিকটিম টার্গেট করে যাত্রী বেশে টমটমে উঠে পড়ে তারা। শহরের আসার পথে আলীরজাহাল থেকে হাশেমিয়া মাদ্রাসা সেতু পর্যন্ত স্থানে সুযোগ বুঝে ছুরি ঠেকিয়ে টমটম চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে মূল্যবান জিনিসপত্রি ছিনিয়ে নেয়। ভীতি সৃষ্টির জন্য অধিকাংশ ঘটনায় ছুরিকাঘাত করে। অন্যদিকে আরেকটি ভয়ংকর ছিনতাইকারী গ্রুপ হচ্ছে ‘সিএনজি সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটটি কলাতলী ও হাসাপাতাল এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। গত তিন মাসে অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজনের অভিযোগ, এই সিন্ডিকেটটির কাছে থাকে পিস্তল ও ধারালো ছুরি। পিস্তল ও ছুরি ঠেকিয়ে এই ছিনতাইকারী গ্রুপ প্রায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে ঝামেলা এড়াতে প্রশাসনকে জানানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান ভুক্তভোগীরা। তারপরও কিছু ঘটনা মিডিয়ায় চলে আসছে। তবে অধিকাংশ ঘটনা চুপে চুপে চলে যায়। কারণ পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও হারানো মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
জানতে চাইলে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। ওই ১৫টি স্পট ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন অভিযান চলছে। বেশ কয়েকজন ছিনতাকারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সাধারণ লোকজনকের আহ্বান জানাচ্ছি, ছিনতাইকারীর অবস্থানসহ কোনো তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে জানাবেন। আমরা সাথে সাথে অভিযান চালাব।’
"