মাহাবুব চান্দু, মেহেরপুর
সরেজমিন প্রতিবেদন
স্কুলের চারটি গাছ বিক্রি করে অর্থ লোপাট!
মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি শিশু গাছ বিক্রি করে অর্থ হজম করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি একরামুল হক ও প্রধান শিক্ষক শাহিন আক্তারের বিরুদ্ধে। এক এনিয়ে গত ১৮ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ইউইও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মতিয়ার রহমান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সহকারি ইউইও ওলিউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামিম সুলতান ও আসাফ উদ দৌলা।
সরেজমিনের গতকাল রোববার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ২১ লাখ টাকা বরাদ্দে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলছে। বিদ্যালয়ে পশ্চিম পাশে সীমানা সংলগ্ম ৫টি বড় শিশুগাছ ছিল। এর একটি বিদ্যালয়ের ভেতর আর বাকি চারটি ছিল প্রায় দেওয়াল বরাবর। নির্মাণ শ্রমিক সরদার জানান, প্রাচীর সমান করে দুইটি আর প্রাচীরের পাশে দুইটি শিশুগাছ কাটা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিন আক্তার জানান, কেটে ফেলা ওই চারটি শিশু গাছ পাশের জমির মালিক গোলাম হোসেনের। গাছের শিকড়ে প্রাচীরের ক্ষতি হতে পারে বলে তাকে গাছগুলো কেটে নিতে বলা হয়েছিল। গোলাম হোসেন গাছগুলো একই গ্রামের পঁচা শেখের কাছে বিক্রি করলে তিনি কেটে নিয়েছেন। তবে কত টাকায় বিক্রি করেছেন তা বলতে পারেননি এই শিক্ষক। এর প্রমাণ হিসেবে এসময় তিনি সাদা কাগজে একটি বিক্রি করার চুক্তি নামা দেখান। তবে চুক্তিনামায় গাছের সংখ্যা এমনকি বিক্রিত মূল্যের কথাও উল্লেখ ছিল না। একই কথা বলেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি একরামুল হক।
কিন্তু এ ব্যাপারে পাশের জমির মালিক গোলাম হোসেনের বাড়ি গিয়ে কথা বলে জানা গেল অন্য কথা। তিনি জানান, গাছগুলো ৭০ হাজার টাকায় স্কুল কমিটি ও হেড মাস্টার বিক্রি করেছেন। তাকে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের গর্ত ভরাট করার জন্য মাটি ফেলবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এক মাস পার হলেও এখনো মাটি ফেলেননি। তিনি বলেন, ‘গাছ বিক্রেতার সঙ্গে আমার কোন লেখাপড়া (চুক্তি) হয়নি। স্কুল থেকে আমাকে একটি কাগজে সই (স্বাক্ষর) করিয়ে নিয়েছেন।’ এ বিষয়ে কথা বলতে গাছের ক্রেতা পঁচা শেখের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলাও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ওলিউর রহমান বলেন, আগামিকাল (মঙ্গলবার) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে সেভাবে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
লিখিত অভিযোগ পাওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে মেহেরপুর সদর ইউইও আপিল উদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৬ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
"