শাহ আলম, খুলনা

  ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে বাড়ছে লবণের মাত্রা

উজানের পানি না আসা, নদী দখল ও গতিপথ পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণের মাত্রা বাড়ছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানের লবণের মাত্রা বেড়ে সাত গুণ ছাড়িয়েছে। লবণাক্ত বাতাস আর পানিতে মিশে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদীর মাছ ও জলজ প্রাণীকূলের জীবনচক্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ভৈরব নদের লবণ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। পাঁচ বছর আগে ভৈরব নদের নোয়াপাড়া ঘাটে লবণের মাত্রা ছিল ০.৪ পিপিটি (পার্টস পার থাউজেন্ড)। আর এখন এখানে লবণের মাত্রা ৭.২ পিপিটি। একইভাবে ফুলতলা ঘাটে ০.৬ পিপিটি থেকে বেড়ে ৭.৪ পিপিটি, লবণচরা ঘাটে ৩.১ থেকে বেড়ে ৭.৭ পিপিটি, মোংলা পশুর নদীতে ৮.৬ থেকে ১২.১ পিপিটি, রামপাল শেলা নদীতে ৯.০ থেকে ১৩.৮ পিপিটি, বটিয়াঘাটা কাজীবাছা নদীতে ৩.২ থেকে ৭.৯ পিপিটি, সাতক্ষীরা কাকশিয়ালী নদীতে ১২.৬ থেকে ১৩.৮ পিপিটি। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী লবণের মাত্রা ৫ পিপিটির বেশি হলে তা পরিবেশ ও জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি স্বরূপ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদে বলেন, নদীর পানিতে লবণ বাড়ার সাথে সাথে তা শোষণ প্রক্রিয়ায় আশপাশ অঞ্চলের মাটিতে প্রবেশ করে। ফলে ওই অঞ্চলের মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। মাটিতে বসবাসকারী অণুজীবগুলো মারা যায়। উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। ফসল কমে যায়। এছাড়াও পানির লবণ বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে মাটি ও পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তিনি আরও বলেন, লবণপানি বাস্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। এতে লোহা ও ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রে মরিচা আসে। দালানকোঠাসহ বিভিন্ন স্থাপনা তাদের স্থায়ীত্ব হারিয়ে ফেলে। লবণের মাত্রা বৃদ্ধিও প্রভাব সম্পর্কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মাটিতে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। ধানের থোড় হবে না চিটা বেশি হবে। অনেক জায়গাতে চারাই গজাবে না। দীর্ঘমেয়াদে লবণ পানিতে মাছ চাষ করলে সেই মাটিতে ঘাস পর্যন্ত জন্মাবে না।’

ওই দুই অধ্যাপকে দেওয়া তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মেহেরপুর জেলার ভেতর দিয়ে ভৈরব নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা হয়ে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলেছে। সীমান্ত থেকে মেহেরপুর শহরের পাশ দিয়ে কাথুলি পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার ভৈরব নদ পুরোটাই ধান খেতে পরিণত হয়েছে। এজন্য ভারতে অপর অংশ থেকে ভৈরবে কোন পানিই প্রবেশ করতে পারে না। তাই ধীরে ধীরে প্রতি বছরই ভৈরবে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানে পানি প্রবাহ আসতে নদটি পুনঃখনন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist