কক্সবাজারের (চকরিয়া) প্রতিনিধি

  ২২ এপ্রিল, ২০১৮

উজাড় হচ্ছে চকরিয়ার সংরক্ষিত বনের কাঠ

অভিযোগের তির বিট কর্মকর্তা ও প্রহরীর দিকে

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা ও নলবিলা বনবিটের অধীনস্থ শত বছরের মূল্যবান গর্জন, সেগুন গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভিযোগ রয়েছে, বন প্রহরী আতিক উল্লাহ ও নলবিলা বিট কর্মকর্তা কাঠ চোরদের সঙ্গে মাসিক মাসোয়ারাসহ প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে বনাঞ্চলকে বিরান ভূমিতে পরিণত করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই মোটরসাইকেলে করে ডুলাহাজারা শাহ সুজা সড়ক দিয়ে লামা বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা জ্বালানি কাঠ, গোল কাঠ, বাঁশ ও ডুলাহাজারা বিটের ডুমখালী বন থেকে শতবর্ষী গর্জন গাছ ও সেগুন গাছ রিংভং ব্লক থেকে মূল্যবান সেগুন কাঠগুলো বন প্রহরী আতিক উল্লাহর সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরেরা নিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবান কাঠগুলো কাঠ চোরেরা কেটে নেওয়ার পর বন বিভাগের কর্মচারীরা শ্রমিক দিয়ে গাছের গোড়াগুলো তুলে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ সূত্র জানায়, চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া ও খুটাখালী মৌজার ৩৯৬ হেক্টর এবং নলবিলা বানিয়ারছরা বিট বনভূমি ১৯৩১ ও ১৯৩৫ সালে গেজেট নোটিফিকেশন মূলে সংরক্ষিত বনভূমি হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও পর্যটন নগর কক্সবাজার যাওয়ার সময় চোখে পড়ে চকরিয়ার খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান। ৩৯৬ হেক্টর বনভূমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে গর্জন বৃক্ষসমৃদ্ধ দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এই জাতীয় উদ্যান। মাদার ট্রি সমৃদ্ধ এই বনভূমিকে ২০০৫ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কথা ছিল এই জাতীয় উদ্যানের ১০ হাজার ৩৩৭টি মাদার ট্রি রক্ষায় উদ্যানের চারপাশে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করার। ন্যাশনাল পার্ক বাস্তবায়নের ঘোষণার পর এই পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাদার ট্রি নিধন হয়েছে। ২০০৪ সালের গণনায় পার্কে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার ৩৩৭টি মাদার ট্রি রক্ষিত ছিল।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সদর রেঞ্জার স্পেশাল এসও মেহেদি হাসান বলেন, নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় ভিলেজারের সহযোগিতায় দৈনিক হাজার হাজার টাকার চাঁদা আদায় করছে তা মোটেও সত্য না। যদিওবা আমার অজান্তে কোনো বন প্রহরী নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি বনজসম্পদ রক্ষার্থে দ্বায়িত্বরত স্টাফগণ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানসহ অন্যান্য বনবিটের অধীনস্থ শতবর্ষী মাদার ট্রি রক্ষায়। এমনকি ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমেও সিএমসি কমিটি গঠন করে জাতীয় উদ্যান মাদার ট্রি রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। এর পরও উদ্যানের মাদার ট্রি লোপাট হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের সদ্য বিদায়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, কাঠ চোরাকারবারি ও বনদস্যু সিন্ডিকেট সদস্যরা কয়েক ধাপে বিভিন্ন কৌশলে বৃক্ষনিধন করে থাকে। তারা এ কাজে ব্যবহার করে নারী-শিশুদেরকেও। প্রতিদিন ভোর ও সন্ধ্যায় নারী ও শিশুদের মাধ্যমে তারা প্রথমে গর্জনবৃক্ষের গোড়া ছেঁটে (গার্ডলিং) ফেলে। কেউ কেউ গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে তুঁতে। গার্ডলিং ও তুঁতে প্রয়োগের কারণে গাছের ডালপালা পাতা শুকিয়ে যেতে শুরু করলে কাঠ চোরেরা গাছে উঠে প্রথমে ডালপালা কেটে ফেলে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত হলে করাত দিয়ে কেটে নেওয়া হয় গোড়া থেকেই।

এ বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দখল বা কাঠ চোরদের বিরুদ্ধে কাজ করতে গেলে আ.লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। তবে কাঠ চোর রিজার্ভ ভূমি দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে এবং ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। অভিযানের প্রেক্ষিতে ভূমি দখলবাজ কাঠ চোরদের আটকসহ আইনি ব্যবস্থা নিয়মতান্ত্রিক চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist