উজ্জ্বল নাথ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)
হালদায় বেড়েছে মা মাছের ডিম
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে এবার মাছের ডিমের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার পর থেকে মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে। এর আগে গত বুধবার হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মাছ।
ডিম সংগ্রহকারী জেলে ও স্থানীয়রা বলছেন, গত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মাছ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গতবার ডিম সংগ্রহ হয়েছিল এক হাজার ৬৮০ কেজি। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এবার ডিম সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। ৪০৫টি নৌকা নদীতে ডিম সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। এই হিসেবে এবার রেণু মিলবে প্রায় ৩৭৮ কেজি। সব নৌকা এখনো ফেরেনি। পূর্ণাঙ্গ হিসেবে রেণুর পরিমাণ আরো কিছু বেশি হতে পারে। যা খুবই আশাব্যঞ্জক।
গত কয়েক বছর ধরেই হালদায় ডিমের পরিমাণ ক্রমাগত কমছিল। পুরোদমে ডিম দেওয়ার আগে বুধবার মাছেরা নমুনা ডিম ছাড়ার পর প্রস্তুতি নিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় জেলেরা। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশের গড়দুয়ারা, আজিমের ঘোনা, অঙ্কুরিয়া ঘোনা, কাগতিয়া, নাপিতের ঘোনা, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ডিম সংগ্রহ শুরু করেন তারা। সেই কাজ শেষ হয় গতকাল শুক্রবার দুপুরে। ডিম সংগ্রহকারী মনির হায়াত সওদাগর বলেন, ‘আমার ছয়টি নৌকা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম সংগ্রহ করেছে। পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডিমের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।’ হাটাহাজারী উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা কাজী আবুল কালাম বলেন, ডিম থেকে রেণু হলে ১০ দিন পর পূর্ণাঙ্গ হিসাব তারা জানাতে পারবেন।
নদী দূষণ ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে হালদায় মা মাছের ডিম উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়ায় জেলেরাও এবার খুব খুশি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ এবার আগের চেয়ে ভালো। সেই ফলই এবার পাওয়া গেছে। ডলফিন ও মাছ রক্ষায় ড্রেজার চলাচল এবং বালি উত্তোলন বন্ধ করা, পিকেএসএফ ও আইডিএফের তত্ত্বাবধানে স্পিডবোটের মাধ্যমে নিয়মিত পাহারা দেওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি, চোরা শিকার কমা এবং ভুজপুর ড্যাম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পানির উপযুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করার কারণেই এবার বেশি ডিম পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। হালদাকে দূষণের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হলে আবার আগের মত ডিম পাওয়া যাবে বলে মনে করেন মনজুরুল কিবরিয়া।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পূর্ণিমা-অমাবস্যা তিথিতে পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হলে এবং নদীর পানির তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে মা মাছ ডিম দেয়। হালদায় মূলত রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশ-জাতীয় মাছ ডিম দেয়। কিন্তু চোরা শিকারিদের উৎপাত আর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলাজুড়ে থাকা এই নদীতে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। ফলে ডিম উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছিল। ২০১৪ সালের ১২ মে, ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল, ২০১৬ সালে ১৯ মে এবং ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। সরকারি হিসাবে ২০১২ সালে নদী থেকে সংগ্রহ করা ডিমে রেণু হয়েছিল প্রায় এক হাজার ৬০০ কেজি। ২০১৩ সালে তা কমে ৬২৪ কেজি এবং ২০১৪ সালে আরো কমে মাত্র ৫০০ কেজিতে দাঁড়ায়।
"