আব্দুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ নগরীর বেহাল প্রধান ৩ সড়ক
১০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে প্রায় এক থেকে দুই ঘণ্টা
নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রধান তিন সড়ক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, চাষাঢ়া-শিমরাইল সড়ক ও চাষাঢ়া-পাগলা- পোস্তগোলা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। নগরজুড়ে উড়ছে ধুলাবালি আর সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে ঘটছে দুর্ঘটনা। যানজট তো নৈমত্তিক বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এখন সব রাস্তায় চলাচল করা নগরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ।
এর মধ্যে চাষাঢ়া-সাইনবোড লিঙ্করোড পর্যন্ত আট কিলোমিটার ও শিমরাইল চিটাগাংরোড থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত আট কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) । তবে হাজীগঞ্জ থেকে মেট্রো হলের সামনে সলিমুল্লাহ সড়ক পর্যন্ত রাস্তাও বেহাল।
সরেজমিন গত কয়েক দিন ধরে চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড লিংক রোডের চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জর রাইফেলস ক্লাবের সামনে, আর্মি মার্কেটের সামনে, লামাপাড়া, শিবুমার্কেট, ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সামনে, জালকুড়ি, ভুইগড়, চাষাঢ়া থেকে সলিমুল্লাহ সড়ক, মেট্রোহল, খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে, বরফকল, ড্রেজার পরিদফতর। এ ছাড়া এ সড়কের এ অংশের হাজীগঞ্জ, আইটিস্কুল, পাঠানটুলী, চৌধুরীবাড়ি, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো থেকে অক্টো অফিস, পঞ্চবটি, পাগলা সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার রাস্তাগুলো বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বাইরের মূল রাস্তা ও তার আশপাশের অলিগলির অনেক রাস্তাই ভাঙাচোরা। প্রায় প্রতিটি সড়কেই ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা এসব ভাঙা রাস্তা অতিদ্রুতই সংস্কারে বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে, যা চলমান রয়েছে। তবে নতুন সব রাস্তা সংস্কার করা হলে রাস্তার বর্তমান চেহারাই পাল্টে যাবে। তবে কবে নাগাদ এসব রাস্তায় চলাচলে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব হবে তা কেউ বলতে পারেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, মূল সড়কের মাঝখান দিয়ে একটি লেনের মতো করে সোজা রাস্তা বরাবর খনন কাজ চলছে। রাস্তার মাঝে কাটা-ছেঁড়া হলেও সড়কের দুপাশ দিয়ে গাড়ি চলছে। মূল সড়ক ছোট হয়ে যাওয়ায় বেঁধেছে তীব্র যানজট। এ যানজট ছড়িয়ে পড়েছে গোটা নগরীতে।
এ ছাড়া রাস্তা পার হতে পথচারীদের বেগ পেতে হচ্ছে। রাস্তা ছোট হওয়ায় ধীরগতিতে গাড়ি চলছে আবার কখনো থেমে আছে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ১০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে প্রায় এক থেকে দুই ঘণ্টা। মূলত নিয়মিত সংস্কার না করায় এসব গর্ত থেকে প্রতিনিয়তই বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গর্তে পড়ে রাস্তায় চলাচলকারীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দিনে-রাতে ঘটছে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ঘটনা। এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যাওয়ার কারণে পুরনো গর্তগুলো বোঝার কোনো উপায় না থাকায় রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশাসহ মিনিবাসগুলোকে রাস্তায় আটকে থাকতে ও নানা দুর্ঘটনায় পড়তে দেখা যায়, যার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড লিংক রোডের সংস্কার কাজ নিয়ে সড়ক ও জনপথের (সওজ) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার শেখ বলেন, নগরীর চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড লিঙ্ক রোড পর্যন্ত আট কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে আপাতত সাইবোর্ড থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার এক পাশের ওভারলেপের কাজ হয়েছে। আজ শনিবার থেকে মিলিং মেশিনে কাজ শুরু হবে। তবে এর মধ্যে ২৮০ মিটার রাস্তার কাজ বাদ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে চাষাঢ়া অংশে একপাশে সিটি করপোরেশনের কাজ করছে বিধায় তার জন্য রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ড্রেনের কাজ চলছে বিধায় আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। সিটি করপোরেশন ড্রেন না করা পর্যন্ত এটা এমনভাবেই থাকবে। কাজ শেষ হতে কত দিন সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তার লিঙ্ক রোডের এক পাশের কাজ আমরা ১৫ দিনের মধ্যে করে ফেলতে পারব।
চিটাগাংরোড থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সওজ নারায়ণগঞ্জ। এ ব্যাপারে সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আশফিয়া বেগম বলেন, অচিরেই এ অংশের সংস্কার কাজ শুরু হবে। এটা সামনের সপ্তাহ থেকেই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। হাজীগঞ্জ থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত সড়ক দেখভালের দায়িত্ব সম্ভবত সিটি করপোরেশনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম এহতেশামুল হক বলেন, সংস্কারকাজ নিয়মিতভাবেই চলছে। যার যার রাস্তা অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে।
তবে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া জেলা পরিষদের ডাক বাংলা থেকে পঞ্চবটি ফতুল্লা হয়ে পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত সড়কটির ব্যাপারে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী ইরাজ উদ্দিন দেওয়ান বলেন, আমি যতদূর জানি এ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ। আমাদের জেলা পরিষদের এখানে কিছু করণীয় নেই।
"