জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
ট্রেন থেকে তেল চুরি রুখবে কে?
কিছুতেই থামছে না উত্তরাঞ্চলের চলন্ত ট্রেন থেকে তেল চুরির ঘটনা। দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সৈয়দপুর হয়ে চিলাহাটি স্টেশন পথে চলাচলরত ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে চুরি অব্যহত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে রেলের ইঞ্জিন চালকসহ আর.এন.বি-এর কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্যদের সহযোগিতায় করেন। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশ কজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্বতীপুর থেকে সৈয়দপুরে চলাচলরত সীমান্ত এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেসসহ নীলসাগর এক্সপ্রেস থেকে প্রায় নিয়মতি তেল চুরি হচ্ছে। এ জন্য তারা বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন স্থান। এগুলো হলোÑপার্বতীপুরের বেলাইচন্ডি, সৈয়দপুর, খয়রাতনগর, দারোয়ানী, নীলফামারী কলেজ স্টেশন ও তরণী বাড়ি রেল স্টেশন এলাকার সিগন্যাল সংলগ্ন এলাকাসহ একাধিক জায়গায় চলন্ত ট্রেন থেকে ব্যারেল ভর্তি তেল নামিয়ে নেওয়া হয়। আর এই কাজে রেলের ইঞ্জিন চালকসহ আর.এন.বি-এর কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্যদের সহযোগিতায় করেন বলে অভিযোগ আছে।
অভিযোগে বলা হয়, পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি স্টেশন পর্যন্ত যেসব স্থানে তেল চুরি হচ্ছে সেসব স্থানের চোরেরা তেল নিয়ে যাচ্ছে পার্বতীপুরের বেলাইচন্ডি এলাকায়, সেখান থেকে তা পাচার করা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। সৈয়দপুর শহরের বিশু ও বিডিআর নামের কুখ্যাত চোর জিআরপি থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকার্তার সহযোগিতায় ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে তেল চুরি করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি তার সাথে একই এলাকার ‘খান’ নামের এক ব্যক্তিও সম্পৃক্ত হয়েছেন।
জিআরপি সৈয়দপুর থানা ওসি এমদাদুল হক বলেন, তিনি এই থানায় সদ্য যোগ দিয়েছেন। তবে তেল চুরির বিষয়টি শুনেছেন। তিনি স্বীকার করেন তার থানায় তেলচুরির সঙ্গে চড়িতের কোনো তালিকা নেই এবং অভিযান চালান হয় না। তিনি আরো বলেন, তার থানা থেকে তেলচুরি রোধে কোনো অভিযান চালাতে পারেন না, এটা পার্বতীপুর জিআরপি থানা চালাতে পারে। একই কথা বলেন সৈয়দপুর কারখানার এক আরএনবি কর্মকর্তা বাবুল শেখ। তিনি বলেন, সৈয়দপুর আরএনবি নিরাপত্তা অভিযান চালাতে পারে না। পারে পার্বতীপুর কারখানার ‘ব্যাকশব’।
সরেজমিনের গত সোমবার দুপুর ১২টার পর পার্বতীপুর স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখায় যায়, স্টেশন থেকে ৫শ গত দূরের পণ্যখালাসের প্লাট ফর্মের দাঁড়িয়ে থাকা তিতুমীর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন থেকে প্লাস্টিকের গ্যালনে তেল ভরা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হয় নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্রেনটি পার্বতীপুর স্টেশন থেকে সৈয়দপুর স্টেশন হয়ে রাজশাহী যাবে।
নাম না প্রকাশের শর্তে তেল চুরির সঙ্গে যুক্ত একজন জানান, পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত যে কয়টি তেল চোর রয়েছে তাদের সর্দার হলো বিলাইচন্ডি এলাকার সিরাজুল ইসলাম নামের কুখ্যাত চোর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যত ব্যারেল তেল চুরি হয় তার প্রায় সবই মজুদ করা হয় ওই সিরাজুলেগোপন গোডাউনে এবং সেখান থেকে পাচার করা হয় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। উত্তরাঞ্চলের তেল ক্রেতাদের সাথে সিরাজুলের মোবাইল যোগাযোগ হলেও ট্রেনের নির্ধারিত সময়ে তাকে বিলাইচন্ডি রেল স্টেশনে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়।
এক রেল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ট্রেনের ইঞ্জিন চালক, আর.এন.বি কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ জিআরপি পুলিশের সহযোগিতায় চোরেরা তেল চুরিতে বেপরোয়া হওয়ায় সরকার প্রতি বছর ট্রেন খাত থেকে মোটা অংকের লোকসানের অংক গুণছেন। অথচ তেল চোরসহ তাদের মদদকারিরা গুণছেন প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর জাতীয় পার্টি শাখার সভাপতি আলহাজ জয়নাল আবেদিন জানান, সরকার ট্রেন খাতে উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে চলেছেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ বেশ কজন ব্যক্তির কারণে ট্রেন খাত থেকে উন্নয়ন বঞ্চিত হচেছন সরকার। এসব ব্যপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
এ ব্যপারে সৈয়দপুর স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম জানান, তেল চুরির অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। কিন্তু প্রমাণ মিলছে না, প্রমাণ মিললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
"