রাজীবুল হাসান, শ্রীপুর (গাজীপুর)

  ১৮ এপ্রিল, ২০১৮

মুখ থুবড়ে পড়েছে শ্রীপুরে বনের বেত বাগান প্রকল্প

এক যুগ আগে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও কুটিরশিল্প-সমৃদ্ধ করার জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে সৃজন করা হয়েছিল বিশাল বেত বাগান। ঢাকা বনবিভাগের এ প্রকল্প কয়েক বছর আগেও সচল ছিল। ঘরের সোফা, চেয়ার ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরিতে বেতশিল্পের কদর ছিল এলাকাজুড়ে। এ কুটিরশিল্পকে জীবিকা হিসেবে নিয়ে অনেক মানুষ জীবনধারণ করে আসছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকটা হারাতে বসেছে বেত বাগান। এমনকি এ কুটিরশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বেত অনেকে এখন রান্নার কাজেও ব্যবহার করছেন।

শ্রীপুর উপজেলা রেঞ্চ কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বাঁশ, বেত ও মুর্তা বাগান সৃজন প্রকল্পের আওতায় গত ২০০৫-০৬ সালে শ্রীপুর সদর, সিংড়াতলী, গোসিংগা, সাতখামাইর, কাওরাইদ, শিমলাপাড়া, রাথুরা বিটে মোট ২০০ হেক্টর জমিতে উপকারভোগীর মাধ্যমে বেত বাগান করা হয়। এরপর পাঁচ মেয়াদে আরো সাড়ে ৩৩ হেক্টর বেত রোপণ করা হয়। তাদের হিসাবমতে, গত ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শ্রীপুর উপজেলার সাতটি বিটে মোট ২৩৩ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে বেত বাগান সৃজন করা হয়েছে। মোট বিক্রীত মূল্যের ৪৫ শতাংশ উপকারভোগী পাবেÑ এই শর্তে বেতবাগানের প্লট দেওয়া হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার শিমলাপাড়া ও আশপাশের কয়েকটি শাল বনের অভ্যন্তরে সৃজিত বেত বাগান পরিদর্শন করে দেখা যায়, অনেক স্থানে বেতগাছের ঝোপ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েক স্থানে বেতগাছগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অবহেলা আর অযতেœ যে বেতগাছগুলো এখনো টিকে আছে সেগুলো প্রায় নিষ্প্রাণ।

শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া, গোসিংগা, সাতখামাইর ও রাথুরা এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনগুলোতে পাতা কুড়াতে গিয়ে অনেকেই বেতগাছ কেটে বাড়িতে নিয়ে রান্নার কাজে লাগায়। তা ছাড়া অসচেতন মানুষের ফেলে যাওয়া জ্বলন্ত সিগারেটের আগুনের কারণেও অগ্নিকা- ঘটে। ফলে বেতগাছগুলো পুড়ে যায়। গত ছয়-সাত বছর আগেও বনে প্রচুর বেতগাছ ছিল। স্থানীয়রা জানান, উপকারভোগী হিসেবে বনবিভাগ থেকে নির্দিষ্ট কিছু লোক ৭ বিঘার প্লট পেয়েছে। বেতগাছ রোপণের পরপরই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অগ্নিকা-ের ফলে তা ধ্বংস হয়ে গেছে। তা ছাড়া দুষ্ট লোকেরা বেতগাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলেও বন বেতশূন্য হয়ে যাচ্ছে।

আক্তাপাড়া গ্রামের বেত বাগানের উপকারভোগী জামাল উদ্দিন জানান, বেত বাগান করে তারা কোনো উপকার পাননি। ২০০৭ সালে তিনি ৭ একর জমির প্লটে বেতগাছ লাগিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় আগুনে পুরো বাগানই ধ্বংস হয়ে গেছে।

একই গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, গ্রামের ১০-১২ জন উপকারভোগী প্লটপ্রাপ্তরা বেত বাগান থেকে লাভের মুখ দেখতে পাননি। তিনি আরো জানান, বেত বাগান সঠিক পরিচর্যা করলে এ খাতটি খুব লাভজন হয়ে উঠতে পারে। রাথুরা এলাকার আল-আমীন জানান, দিনের বেলায় অনেক স্থানে গাছ কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফলে এ কার্যক্রমে কোনো লাভের মুখ দেখতে পারেননি বলে বিষয়টিতে একসময় অনীহা চলে আসে।

শ্রীপুরের বিভিন্ন বাজারে বেত দিয়ে তৈরি জিনিস বিক্রেতা রহমত মিয়া জানান, বেতের পাটি, মুড়া, ঝুড়ি, চেয়ার, দোলনাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরিতে সিলেট থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। শ্রীপুরে বনের ভেতর লাগানো বেতগাছ বড় হওয়ার আগেই তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এই এলাকা থেকে বেত সংগ্রহ করা যায় না। তিনি আরো জানান, সিলেটের মতো এই এলাকার শালবন বেত চাষে খুবই উপযোগী। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এখানে উৎপাদিত বেত দেশীয় ঔতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে।

শ্রীপুর উপজেলা রেঞ্চ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পকে সমৃদ্ধ করতে, পরিবেশ রক্ষায় ও বনের নিরাপত্তার জন্য শাল বনের ভেতর বেত বাগান করা হয়েছিল। উপকারভোগীদের তত্ত্বাবধানে তা এখনো চলমান আছে। তবে কিছু এলাকায় অসচেতন মানুষের তৈরি আগুনে বেতগাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া লোকবল সংকটের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেতগাছ রক্ষণাবেক্ষণ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। তবু বনবিভাগের সাধ্য অনুযায়ী বেতগাছ রক্ষায় চেষ্টা করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist