প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
৪ জেলায় কালবৈশাখীর তান্ডব পল্টুনডুবি : স্কুল ভেঙে আহত ৬
চৈত্র শেষ, বৈশাখের শুরু। বৈশাখ মানেই আকাশে কালো মেঘের সঙ্গে গর্জন ও ঝড়–বৃষ্টি। এ ঝড়বৃষ্টিতে গতকাল মঙ্গলবার ভোলা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মাদারীপুরের রাজৈরে বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের আধাপাকা টিনের ঘর ভেঙে ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ :
ভোলা : জেলার লালমোহনে মঙ্গলবার দুপুরে বৈশাখী ঝড়ে কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আধাপাকা টিনের ঘর ভেঙে ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আফসার উদ্দিন। আহতদের উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লালমোহন ইউএনও হাবিবুল হাসান রুমি জানিয়েছেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে এখানে বেশকিছু বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে গেছে। অনেক জায়গায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।
আহতদের মধ্যে রয়েছে, ৬ষ্ঠ শ্রেণির মিথিলা মজুমদার, ৮ম শ্রেণির যুগল চন্দ্র দে, ৯ম শ্রেণির ইমরান, মাহাদী, ১০ম শ্রেণির আবদুল্লাহ, নাইমুন। এদের মধ্যে যুগল চন্দ্র’র অবস্থা আশঙ্কাজনক। কৃষক জাফর আলী জানান, মৌসুমী তরিতরকারির জন্য এ বৃষ্টি আর্শিবাদ, তবে বৃষ্টি স্থায়ী হলে বাঙ্গী এবং তরমুজ ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
ঝালকাঠি : কাল বৈশাখী ঝড়ে ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালের পল্টুনসহ ঢাকাগামী সুন্দরবন-১২ নামের একটি লঞ্চ নদীতে ভেসে গেছে। প্রচন্ড ঝড়ে লঞ্চ টার্মিনালটি ভেঙে গেছে। লঞ্চঘাট এলাকার প্রায় ২০টি দোকান ও বসত ঘর ভেঙে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ৩ টার দিকে মাত্র ৫ মিনিটের ঝড়ের তান্ডবে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক, জেলা আ.লীগের সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির ও পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা লঞ্চঘাট পরিদর্শন করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রচ- বেগে ঝড় শুরু হলে পল্টুনের সাথে বাঁধা লঞ্চটিকে দড়ি ছিড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদীর ওপারে। ঝড়ে ঘাটটি ওলট পালট হয়ে যায়। তবে এতে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সুন্দরবন-১২ লঞ্চের মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, প্রচ- ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে আমি লঞ্চের সুকান ধরে বসি। কিন্তু বাতাসে পল্টুনের শিকল ছিড়ে লঞ্চসহ নদীতে ভেসে যায়। আমি লঞ্চটি পল্টুনসহ নিয়ন্ত্রণে রেখে নদীর ওপারে নিয়ে যাই। ঘাটের গ্যাংওয়ে নদীতে ডুবে গেছে। আমাদের দুটি টিকিট বুকিং কাউন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রচ- গরমের পর জনমনে স্বস্তি ফিরলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঝড়ে বিপুল সংখ্যক গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। প্রায় ২৫ মিনিটের এ ঝড়ের কারণে গতকাল রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এলাকার বিদু্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
রাজৈর (মাদারীপুর) : কালবৈশাখীর তা-বে রাজৈরের ৩ ইউনিয়নে ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঝড়ের তান্ডবে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি, সাতপাড় (রাজৈর অংশ) ও খালিয়া ইউনিয়নের শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি, শত শত গাছ, দোকান-পাট এবং কাঁচা-পাকা ধান ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে কদমবাড়ি ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের বিদ্যুতের বেশকিছু খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কদমবাড়ি বাজারের বহু দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। সবকটি ইউনিয়নে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, তাৎক্ষণিকভাবে গাছগুলি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। পরবর্তীতে কৃষকদের যথাসম্ভব সহায়তা করা হবে।
"