জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ১৭ এপ্রিল, ২০১৮

স্বাস্থ্য সেবা

নোয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রোগীর খাবার সরবরাহে অনিয়ম

নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীর খাদ্য সরবরাহে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত পরিমাণের কম এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেছেন রোগী ও স্বজনরা। রোগীদের সপ্তাহে দুদিন খাসির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও ব্রয়লার মুরগি এবং রুই মাছের স্থলে সিলভারকার্প মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে। উপরন্তু স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে একই ঠিকাদার দীর্ঘদিন খাবার সরবরাহ করে আসছেন।

অবশ্য, অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলেও অবস্থা বদলে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে খাদ্যতালিকা ঝোলানো না থাকায় এ নিয়ে কেউ কথাও বলতে পারেন না।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, করোনারি কেয়ার ইউনিটের রোগীর জন্য সপ্তাহে দুদিন-দুবেলা (দুপুর ও রাত) ভাতের সঙ্গে খাসির মাংস এবং বাকি পাঁচদিন রুইমাছ সরবরাহ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ব্রয়লার মুরগি, সিলভারকার্প ও মৃগেল মাছ সরবরাহ করে যাচ্ছেন ঠিকাদার। অবশ্য মাসে দু-তিনদিন কাতলা মাছ সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে রোগীরা জানান, প্রতি সোম ও শুক্রবার দুইবেলা ব্রয়লার মুরগির ছোট্ট একটি টুকরো দেওয়া হয়। দুইবেলা সরবরাহ করা মাংসের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম। অন্য পাঁচদিন সরবরাহ করা মাছের পরিমাণও খুব কম। সকালে ২০০ গ্রামের পরিবর্তে ১০০ গ্রাম পাউরুটি, দুটি শবরি কলার পরিবর্তে সাগর কলা, দুটি ডিমের পরিবর্তে একটি ডিম সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কোনো রোগীর জন্য লাল আটার রুটি এবং ভাত খেতে না পারা রোগীর জন্য গরুর দুধ দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোনো দিনই তা দেওয়া হয় না বলে জানান রোগীরা।

হাতিয়া থেকে আসা রিয়াজ উদ্দিন, মিলন, শরিফা খাতুনসহ একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাবারের রান্নার মান এতই খারাপ যে, রোগীরা তো দূরের কথা, স্বজনরাও মুখে দিতে পারেন না। রোগীর স্বজন আলা উদ্দিন, আলমগীর, আকরব হোসেন, নাছির উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, খাদ্যের মান অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় অনেকেই এ খাবার নেন না। বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খান। তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খাবার পরিবেশনকারীরা নোংরা পাত্রে কিছু ভাত ও একটি বাটিতে সামান্য তরকারি এনে ওয়ার্ডের একপাশে দাঁড়ান। সেখান থেকে সবাইকে নিজ নিজ থালা-বাটিতে করে খাবার নিয়ে যেতে বলেন। দুস্থদের রিলিফ নেওয়ার মতো করে রোগীর স্বজনরা তাদের কথামতো খাবার সংগ্রহ করেন। এটা খুবই অপমানজনক। হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যাওয়া-আসা করে এমন চিত্রের প্রমাণও মিলেছে।

একজন খাবার পরিবেশনকারী বলেন, আমাদের যা এনে দেওয়া হয়, তা-ই রান্না করে পরিবেশন করে থাকি। রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা পাচক স্টুয়ার্ড জানান, প্রতিদিন ১২৫ টাকার মধ্যে রোগী প্রতি খাবারের স্কেল তৈরি করে নেওয়া হয়। ওই টাকার মধ্যেই পরিমাণমতো রোগীদের সরবরাহ করা হয়। তবে তার দাবি, কোনোদিন রোগীদের সিলভারকার্প মাছ দেওয়া হয় না। যদি কেউ এমন অভিযোগ করে থাকে, সেটা মিথ্যা।

তবে, খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জনসেবা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী জহির খান বলেন, খাসির মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকায় রোগীদের মাঝেমধ্যে ব্রয়লার মুরগির মাংস সরবরাহ করা হয়। রুই-কাতলা-মৃগেলের মধ্যে যখন যে মাছ বাজারে পাওয়া যায়, তখন সেই মাছ দেওয়া হয়। তার যুক্তি হলো, মাত্র ২৫০ জন রোগীর খাদ্য সরবরাহের বাজেট থাকলেও বাড়তি রোগীদের খাবার দিতে হয়। কমপক্ষে ২৮০-৯০ জন রোগীকে বাড়তি খাবার দেয়ার কথাও বলেন তিনি। কেননা, থালা নিয়ে এলে কাউকে খাবার না দিয়ে ফেরত দেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য খাবারের পরিমাণ সামান্য কম হতেও পারে।

এতদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহের ঠিকাদারি কিভাবে পেলÑজানতে চাইলে ঠিকাদার বলেন, তিনি নিয়মমতোই সবই পরিচালনা করছেন। দরপত্র অনুযায়ীই তিনি দরপত্র পেয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম সামছুল ইসলাম বলেন, ওয়ার্ডে খাদ্য সরবরাহের তালিকা ঝোলানো না থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। রোগীদের মাঝে উন্নতমানের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেব। এখন থেকে রান্নাঘরের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হবে। দরপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, তার সময়ে নিয়মিত টেন্ডার হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist