মহসীন শেখ, কক্সবাজার ও মামুন আহম্মেদ, বাগেরহাট

  ১৩ এপ্রিল, ২০১৮

টার্গেট পহেলা বৈশাখ

কক্সবাজারে নির্বিচারে জাটকা আহরণ বাগেরহাটে মজুদকৃত ইলিশই ভরসা

দুয়ারে কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালীয়ানার পহেলা বৈশাখ মানেই পান্তা ইলিশ। সাগরে ইলিশের আকাল থাকায়, ঝাঁকে ঝাঁকে ঘরা হচ্ছে জাটকা ইলিশ। সরকারিভাবে জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দূর্বল মনিটরিংয়ের কারণে কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে বেপরোয়াভাবে চলছে জাটকা নিধন। এদিকে বাগেরহাটে এবার মজুদকৃত ইলিশ মাছ দিয়েই পহেলা বৈশাখে চাহিদা মেটাচ্ছেন মৎস্য আড়ৎদারসহ পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখকে টার্গেট করে কক্সবাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীরা ব্যাপক হারে মজুদ করছে জাটকা। তীরে ব্যবসায়ীদের কাছে জাটকার চাহিদা থাকায় জেলেরাও ব্যস্ত জাটকা নিধনে। সরকারের পক্ষ থেকে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা নিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা জেলেদের দাদন দিয়ে জাটকা সংগ্রহ করছে। জাটকা সংরক্ষণ সময়ে জেলেদের সরকারীভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়ার কর্মসূচি থাকলেও কক্সবাজারের জেলেদের ভাগ্যে তা জুটেনি এখন। এছাড়া জাটকা সংরক্ষনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও এখনো কক্সবাজারে দৃশ্যমান কোন অভিযান হয়নি। একারণে অন্যান্য মাছের চেয়ে জাটকাতে বেশি ঝুঁকছে জেলেরা।

বৃহষ্পতিবার সকালে সরেজমিনে নুনিয়াছড়াস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কূলে ভিড়েই জেলেরা ফিশিং বোট থেকে প্রকাশ্যে খালাস করছে জাটকা ইলিশ। এসব জাটকা ইলিশ বিক্রয় এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া খোদ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের সামনেই হচ্ছে। এমনকি জাটকা ধরতে জেলে ও ব্যবসায়ীদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নিজেই উৎসাহ যোগান বলে অভিযোগ।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাংবাদিকের ক্যামরা দেখেই নিজেকে আড়াল করেন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের রমিজ নামের এক জাটকা ইলিশ ব্যবসায়ী। এসময় জাটকা ইলিশের স্তূপের ছবি তুলতে তিনি বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে সাগরে খুব কম মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তাই বৈশাখের চাহিদা মাথায় রেখে আড়তদাররা এখন থেকেই ব্যাপক হারে জাটকা মজুদ করছে।

জাটকা নিধনের বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা অবতরণ কেন্দ্রে কোন জাটকা ইলিশ বিক্রি হয় না দাবী করে তিনি বলেন, এমনিতেই গত ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকে সাগরে মাছ মিলছে না। সেখানে জেলেরা জাটকা পাবে কোথায়। অথচ ব্যবস্থাপকের চোখের সামনেই বিক্রি হয়েছে জাটকা ইলিশ। পরে জাটকা সংরক্ষনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবী করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

কলিম উল্লাহ নামে একজন জেলে বলেন, জাটকা ধরা পড়লেও কোস্টগার্ডের ঝামেলায় পড়তে হয়। ঘুষ দিতে হয় সবাইকে। একারণে অনেকে এখন সাগরে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া জাটকা সংরক্ষণ সময়ে সরকারী চাল পাওয়ার কথা থাকলেও কোন দিনই তারা তা দেখেননি।

জাটকা নিধনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা ড. মোঃ আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, কক্সবাজারে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রয়েছে শুধুমাত্র একটি। জাটকা আসলে আমাদের সাগরের তীরে পাওয়া যায় না। জাটকা থাকে মিটা পানিতে। সাগরের বড় বড় ট্রলার থেকে কিছু বোট কিনে এনে বিক্রি করে।

এদিকে বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে ইলিশের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভের আশাতেই ব্যবসায়ীরা মজুদ করেন ইলিশ। আর পহেলা বৈশাখের ২-১ দিন আগে থেকেই এসব মাছ ছাড়া হয় বাজারে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজারে গিয়ে আড়তদার ও পাইকার বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে এ তথ্য।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকে দুই ঘন্টা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কেবি বাজারের মাছ কেনা বেচা। খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে খুচরা বিক্রেতা আসেন এখানে মাছ কিনতে। বছরের সব থেকে বেশী দাম ও চাহিদা থাকা সত্বেও পহেলা বৈশাখে কোল্ড স্টোরে মজুদকৃত ইলিশের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।

এদিকে চাহিদার কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে ইলিশের দাম বৃদ্ধি করেছেন ব্যবসায়ীসহ আড়ৎদারা। দাম বাড়ানো হয়েছে জাটকা ইলিশের ২শ থেকে ৩শ গ্রামের জাটকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ৩শ টাকা। এছাড়া ৫শ থেকে ৬শ গ্রামের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫ শ থেকে ৭শ টাকায়। তবে কেবি বাজারে এই সাইজের বড় ইলিশের দেখা মেলা ভার। বছরের এ সময়টা ইলিশের দাম কিছুটা বেশি হলেও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে পান্তা-ইলিশের ভক্তরা তাই জাটকা দিয়েই তাদের চাহিদা মেটাতে চায়।

উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, বছরে এ সময়টায় জেলেরা তাদের জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যাস্ত থাকেন। এ কারণে নদী বা সাগরে মাছ থাকলেও সেই পরিমান জেলেরা নদী বা সাগরে মাছ ধরছে না। আর এ কারণেই বাগেরহাট কেবি বাজারে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নতুন কোন মাছ আসছে না। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা যে মাছ গুলো কোল্ড স্টোরে মজুদ করেছিল সেগুলো এখন বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

বাগেরহাট কেবি মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ এসএম আবেদ আলী বলেন, সারা বছরই এবার ইলিশের দাম ভালো থাকায় ব্যবসায়ীরা ইলিশের মজুদ কম করেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ইলিশ মাছের সরবারয় স্বাভাবিক করেছে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist