শংকর চৌধুরী, খাগড়াছড়ি
পাহাড়জুড়ে বৈসাবির রঙিন সাজ
পার্বত্য চট্টগ্রামে আবহমান কাল ধরে লালিত ঐতিহ্যবাহী বহুমূখী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিঝু’ এর সংক্ষিপ্ত সার ‘বৈসাবি’। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাঙালীদের চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ উৎসব। এ সময় বর্ণিল শোভায় শোভিত হয় সমগ্র পার্বত্য জনপদ। যেন পাহাড়জুড়ে উৎসবের আমেজ বৈসাবি সাজে রঙিন খাগড়াছড়ি।
পহেলা বৈশাখে পার্বত্য চট্টগ্রামে মূল উৎসব বৈসাবি। পার্বত্যাঞ্চলের প্রধান সামাজিক বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে নানা আনুষ্ঠনিকতা।
এদিকে পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নববর্ষ বরণ। উৎসব পালন উপলক্ষে গতকাল বুধবার ১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এর উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নুরুল আমিন। এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ি বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান, সিভিল সার্জন মো. শওকত হোসেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী টিটন খীষা, শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কৃঞ্চ চন্দ্র চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী আপু, পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, নির্মলেন্দু চৌধুরী, খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, জুয়েল চাকমাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সচিব নুরুল আমিন বলেন, পাহাড়ের এ উৎসব প্রাণের উৎসব। পাহাড়ে ও সমতলে বসবাসরত সকল নৃগোষ্ঠির মানুষের কল্যাণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে; পাহাড়ি বাঙালির সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। বৈসাবির রঙ ও আলোয় আলোড়িত হবে পাহাড়ের সব মানুষ।
বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে হাজার-হাজার পাহাড়ি-বাঙালী নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণ করে। পরে টাউন হল প্রাঙ্গণে ত্রিপুরা, সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্য, মারমাদের আকর্ষনীয় জল কেলি (পানি খেলা) এবং চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী জুম নৃত্য, সাওতাল সম্প্রদায়ের সাওতাল নৃত্য ডিসপ্লে করা হয়।
বৈসাবির প্রধান অনুষ্ঠান চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানো হবে আজ বৃহস্পতিবার সকালে। চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিঝু আর পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা হবে শুক্রবার। ওই দিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন, নদী, খাল অথবা ঝর্ণায় হবে গঙ্গাদেবীর পূজা-অর্চনা। ১৪ এপ্রিল হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই, পানি উৎসব ও বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা।
এছাড়াও বিকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জেলার ২৫ গুণীজনকে সংবর্ধনা প্রদান করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। পরে এক মনোজ্ঞ বৈসাবি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে নববর্ষকে বরণ করে নিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ. খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সম্মিলিতভাবে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ বরণ করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
"