ঝালকাঠি ও চাঁদপুর প্রতিনিধি
বৈশাখের আগে বাজারে জাটকা ও চাপিলা
বৈশাখ আসতে এখনও বাকি দিন। এরই মধ্যে ঝালকাঠি ও চাঁদপুরের বাজারে চলছে জাটকা ইলিশ বিক্রি। বৈশাখে চাহিদা থাকায় এসব জাটকা ও চাপিলার দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। অথচ ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ, নিধন, মজুদ ও আরোহণ আইনত নিষেধ থাকলেও অধিক মুনাফার আশায় তার তোয়াক্কা করছেন না জেলেরা।
জেলা দুটির মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৯ ইঞ্চি থেকে ছোট সব ইলিশ ও চাপিলা জাটকার আওতায় পড়ে। জাটকার আওতায় সব ধরনের সাইজের ইলিশই বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এসবের বিরুদ্ধে ঝালকাঠিতে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা না মিললেও চাঁদপুরের বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বাংলা বছরের শুরুর (নববর্ষ) দিন ইলিশ ও পান্তা খাওয়া বাঙালির চিরচারিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। বছরের অন্যান্য দিনগুলো বাদ গেলেও অন্তত এই দিন সকলে চায় তাদের আয়োজনে স্থান পাবে পান্তা-ইলিশ। আর সামুদ্রিক ইলিশ লবণাক্ত হওয়ায় এ অঞ্চলের মিঠা পানির রূপালি ইলিশের কদর একটু বেশি। তাই বরিশাল অঞ্চলের ইলিশের চাহিদা সারা বছর সারাদেশে। দেশের বাইরেও রয়েছে এর খ্যাতি। আর এ কারণেই ইলিশের বাজার সব সময় চড়া। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পহেলা বৈশাখের উত্তাপ।
গতকাল সরেজমিনে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে গিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠির বাইরে থেকেও অনেকে আসছেন পহেলা বৈশাখের অনুসর্গ হয়ে ওঠা পান্তা ইলিশের ইলিশ সংগ্রহ করতে। নববর্ষ যত এগিয়ে আসছে, বাজারে কমছে ইলিশের সরবরাহ। যে পরিমাণ ইলিশ আসছে তার প্রায় সবই মজুদ করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে গোপনে বিক্রি করছে জেলেরা। ফলে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে প্রতিদিনই ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে ইলিশ সংশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মৎস্য শ্রমিকরা জানান।
ঝালকাঠি বারচালার সামনে ভ্যান গাড়িতে করে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে গত সোমবার সন্ধ্যায়। বিক্রি করছেন ওমর ফারুক নামে জনৈক এক মৎস্য ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমি জানি এটা জাটকা। সন্ধ্যায় প্রশাসন কঠোর থাকে না বলে বিক্রি করছি। প্রতি কেজিতে ৪/৫টা ওঠে। দাম সাড়ে ৪শ টাকা। এর বেশি কিছু বলা যাবে না বলেও জানান ওমর ফারুক। গত মঙ্গলবার সকাল ৮ টায় লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক থেকে দেড় ইঞ্চির চাপিলা বিক্রি করছে। বিক্রেতারা জানান, ৩০/৪০/৫০ টাকা দরে কিংবা যার কাছ থেকে যে দরে পারি বিক্রি করি। আপনি ছবি তুললেন কিন্তু প্রশাসনের কেউ আসবে না।
জেলেদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, রায়াপুর সংলগ্ন নদী, সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান নদীর বিভিন্ন স্পটে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত জেলেরা নদীতে জাল ফেলে জাটকা শিকার করা হয়। পহেলা বৈশাখকে উদযাপনের জন্য গোপনে জেলেদের সাথে চুক্তি করে মাছ আহরণের পর ডাঙ্গা (কূলে) উঠে পড়ার পরেই চাহিদামত দাম দিয়ে ক্রয় করছে ক্রেতারা।
বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম হওয়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নদীর মধ্যে ট্রলারেই এবং ডাঙায় উঠানোর পর ইলিশ কেনা-বেচা সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বাজারে ইলিশের আমদানি খুব কম।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মন্ডল বলেন, ঝালকাঠিতে জাটকা ইলিশ নিধন ও বিক্রি যাতে না পারে এজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। উপজেলা কর্মকর্তাদেরক তৎপর থাকতে নির্দেশ দিয়েছি।
আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিষেধাঞ্জার মধ্যে বৈশাখকে কেন্দ্র করে এ জেলায়ও ইলিশের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে জাটকা। তবে এরই মধ্যে গতকাল বুধবার চাঁদপুর নৌ-পুলিশের অভিযানে হরিণা ফেরিঘাট থেকে ৮৪ মণ ইলিশসহ তিনজনকে আটক করে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশিম বলেন, ১৪৫টি প্লাস্টিকের ঝুড়ি, ৩টি ড্রামের মধ্যে ৮৪ মণ ইলিশ পাওয়া গেছে। এসব ইলিশের মূল্য আনুমানিক ৭ লাখ টাকা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে এসব ইলিশ জেলা প্রশাসকের নির্র্দিষ্ট হিমাগারে পাঠানো হয়েছে।
"