আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ৩১ মার্চ, ২০১৮

পলাশের ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ নৌপথে চলছে চাঁদাবাজি

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদী পথে প্রকাশ্যে চলছে মালবাহী নৌযানে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ছোটখাটো ট্রলারসহ বড়বড় মালবাহী জাহাজও। প্রতিটি নৌযান থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌযানের চালকদের মারধরসহ মালামাল লুটের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে নৌপথে চাঁদাবাজি হলেও পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ অধিকাংশ ভুক্তভোগীদের।

সরেজমিনে জানা যায়, শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে প্রতিদিন ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা, প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেশবন্ধু সুগার মিল, জনতা জুটমিল, ক্যাপিটাল পেপার মিল, সেভেন রিং সিমেন্টসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পণ্য ও কাচাঁমাল আনা নেওয়া হয়। চাঁদাবাজদের হামলা ও লুটপাটের শিকার হতে হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের নৌযান চালকদের। এছাড়া নৌ পথ দিয়ে আসা বাশ, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার আটকিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পলাশের ডাঙ্গা ও কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদী পথে নিয়মিত যাতায়াতরত কয়েকটি মালবাহী চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, কালীগঞ্জের মাছুম নামে এক সন্ত্রাসী তার বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়ত নৌযান আটক করে টাকা আদায় করছে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বাহিনীর লোকজন লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এসবি বিউটি অফ সাকুরা নামে এক জাহাজের সুকানি মফিজুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম থেকে সার নিয়ে ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানায় আসার পথে কয়েক দিন আগে ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ সীমানায় পৌঁছালে পিছন থেকে একটি ট্রলার নিয়ে ১৫ জন যুবক জাহাজে উঠে। পরে তারা জাহাজের স্টাফদের মারধর করে চাঁদা দাবি করে। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে তারা মাছুম ভাইয়ের লোক। এই পথ দিয়ে যেতে হলে তাদের চাঁদা দিয়েই যেতে হবে। পরে তিন হাজার টাকা দিয়ে আমরা ছাড়া পাই। অপরদিকে আনোয়ার নামে এক ট্রলার চালক জানান, পলাশ থেকে সার নিয়ে মুন্সিগঞ্জে যাওয়ার পথে ডাঙ্গা কালীগঞ্জ সীমানায় প্রায় সময়ই সন্ত্রাসী মাছুম বাহিনী ট্রলার আটক টাকা আদায় করে। টাকা নেওয়ার সময় বলে স্থানীয় এমপি ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে টাকা আদায় করছি। তারা নাকি এই টাকা থেকে থানার ওসি ও এমপিকে টাকা দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালীগঞ্জ ও ডাঙ্গা নৌঘাটের এক মাঝি জানান, মাছুম বাহিনীর ১০ থেকে ১৫ জন লোক কালীগঞ্জ গুদারাঘাটের পাশে ভূমি অফিসে অবস্থান নিয়ে থাকে। দূর থেকে মালবাহী কোনো নৌযান এ পথে আসতে দেখলেই ট্রলার নিয়ে হানা দেয়। অনেক সময় নৌযান চালকদের চিৎকার শুনতে পাই। কিন্তু সন্ত্রাসী মাছুমের ভয়ে কেউ সাহস করে এগিয়ে আসতে চায় না। বাংলাদেশে সার আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের পলাশ শাখার সুপার ভাইজার আল-আমিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডাঙ্গা কালীগঞ্জ এলাকায় মাছুম বাহিনীর লোক সারের জাহাজে চাঁদাবাজি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে পোটন ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী ও পলাশের এমপি পোটন খান কালীগঞ্জের এমপি জানান,এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মাছুমের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর কালীগঞ্জের দড়িসোম এলাকার সফর উদ্দিনের ছেলে মাছুম এলাকায় একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নামে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে এলাকার চিহ্নিত কিছু মাদক ব্যবসায়ী নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলে। এই বাহিনীর মাধ্যমে সে নৌযানে চাঁদাবাজিসহ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত করে আসছে। এর মধ্যে সামসুল, সাব্বির, নেয়ামুল তার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছে বলেও জানা যায়। এছাড়া মাছুম বাহিনীর শাহীন, সোহেল, উপল, রিফাত, নাঈম, সজিব, উজ্জল ও তাহের নৌযান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। মাছুমের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি। নৌপথে চাঁদাবাজির বিষয়ে পলাশ থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান জানান, কালীগঞ্জের কিছু লোক নৌপথে টাকা আদায় করছে। বিষয়টি আমি ওই থানার ওসিকে অবগত করেছি। আমাদের ডাঙ্গার পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধে নৌপথে টহলের ব্যবস্থা করেছি। কালীগঞ্জ থানার ওসি আলম চাঁদ প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist