আদিলুর রহমান তপু, ভোলা

  ২৯ মার্চ, ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তন

ছোট হয়ে আসছে ভোলার আয়তন

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের দ্বীপজেলা ভোলা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে এই জেলায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপশি নদী ভাঙনসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত ৪৭ বছরে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় প্রায় ৪৯ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

জেলায় কর্মরত বিভিন্ন এনজিও সূত্রে জানা গেছে, অনেকেই নদী ভাঙনসহ নানা কারণে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে উদ্বাস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভোলায় শীতের দিনে গরম, ঘন ঘন দুর্যোগ ও অতিবৃষ্টি জনজীবনে প্রভাব পড়ছে। প্রতিকূলতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলবর্তী এলাকার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও মহাসেনের পরে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বহু মানুষ। জলবায়ুর প্রভাবে মাছের সংকট, খেতের ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া ও উপকূলীয় বনের বৃক্ষ মরে যাচ্ছে। সংরক্ষিত বনে খাদ্য ও মিঠা পানির সংকট দেখা দেওয়ায় লোকালয়ে ছুটে আসছে হরিণ। এরমধ্যে আবার নতুন করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা ও আতঙ্ক।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. বাবুল আক্তার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার মেঘনার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ৩৯ কিলোমিটার ও চরফ্যাশন উপজেলা তেঁতুলিয়ায় বিভিন্ন পয়েন্ট ১০ কিলোমিটার বিলীন হয়ে গেছে।

বেসরকারি (এনজিও) সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, বৃষ্টির সময় বৃষ্টি হচ্ছে না, শীতের সময়ও সকালে শীত আবার বিকালে গরম পড়ছে। আগে জেলেরা সারাদিন নদীতে থাকলেও তাদের কোনো অসুখ-বিসুখ হতো না। কিন্তু এখন সামান্য সময় নদীতে থাকলেই তারা নানা অসুখ-বিসুখে ভুগছেন। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। ভোলা সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহাবুব আলম বলেন, কার্বন নিঃসরণের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয় দৈনিক ‘আজকের ভোলা’ সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ভোলায় গত কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি বেশি হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের চরকুরী-মুকরী, ঢালচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দ্বীপবাসীকে অনেকটা রক্ষা করছে। তবে জলবায়ূর পরিবর্তনের কারণে আমরা খুবই শঙ্কিত।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও ডুবোচরের সৃষ্টি হওয়ায় সাগর থেকে মাছ নদীতে আসতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দিন দিন এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান ও গম চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। এ সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য মজবুত বেড়িবাঁধ ও সøুইস গেট নির্মাণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদী ভাঙন ও পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া বলেন, ম্যানগ্রোভ বনের চারা লবণাক্ত পানির কারণে মরে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। জলাশয়গুলো শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে লোনা পানির দখলে চলে যাচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্যের বিচরণ হুমকির মুখে পড়ছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, ভোলা একটি উপকূলীয় দ্বীপজেলা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। এর ফলে মিঠা পানির এলাকাগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ছে, কৃষক তার কৃষি জমি হারাচ্ছে। নদী ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপজেলা ভোলার আয়তন ছোট হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উদ্বাস্ত মানুষের সংখ্যা। এর জন্য চাই সময় উপযোগী পদক্ষেপ। তিনি আনো বলেন, ইতোমধ্যেই জলবায়ু ট্রাস্টের আওতায় বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর প্রভাবে যেন ব্যাপক ক্ষতি না হয় সেজন্য জলবায়ু মোকাবিলায় বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু প্রজেক্ট বিভিন্ন চরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist