অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি বিবেচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান এবং সাবেক ১২ শিক্ষককে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় এনেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। এসব শিক্ষকের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

গতকাল শুক্রবার আরএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, নিরাপত্তা পাওয়া শিক্ষকরা ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যক্তি, জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছ থেকে নানা ধরনের হুমকি পেয়েছেন। এসব তথ্য আমাদের কাছে আছে। শিক্ষকরা যাতে কোনো প্রকার হামলার শিকার না হন এ জন্য শিক্ষকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া ১২ শিক্ষক হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম, সহকারী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান ইমাম, অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবুবকর, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন মাতিন, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন এবং ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম কনক।

এসব শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান ইমাম বাড়ির বাইরে তাদের নিরাপত্তায় পোশাকধারী এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। ক্যাম্পাসে অবস্থানের সময়ও হাসান ইমামের জন্য পুলিশ পাহারা রাখা হচ্ছে। এছাড়া বাকি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাদের কেউ চাইলে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও ভাবছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া এসব শিক্ষকের অনেককেই ২০১৫ সাল থেকে নানাভাবে ‘ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী’, ‘লাল বাহিনী’, ‘চরমপন্থি গ্রুপের নেতা’, ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’ ও ‘জনযুদ্ধের কমান্ডার মেজর জিয়া’ পরিচয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরো অন্তত ৩০ জন শিক্ষককে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর মতিহার থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এরই ভিত্তিতে পুলিশ তাদের ব্যাপারে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকেই এ ধরনের নিরাপত্তায় আমাকে রাখা হয়েছে। আমি কখন কোথায় যাচ্ছি, কী করছি তার সবকিছুই সিটিএসবিকে জানাতে হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ৩ মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর প্রকাশ্যে হামলার পর থেকে তারা বেশি তৎপর হয়েছেন। আবার একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় হুমকি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমনা শিক্ষকদের বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে। তাই হুমকিতে থাকা শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চিন্তা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে শিক্ষকদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই তালিকা পুলিশ আর নেয়নি। পরে হয়তো বা নিজেরা একটা তালিকা করে শিক্ষকদের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তার দিক অন্য সময়ের চেয়ে এখন আরো বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ সামগ্রিকভাবে তৎপর আছে বলেও জানান তিনি।

কমিশনার মাহাবুবর রহমান নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, কয়েকজন শিক্ষককে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সতর্কভাবে চলা উচিত, কেননা তাদের ওপর হুমকি আছে বলে আমরা মনে করি। তারা বাইরে যখন যাচ্ছেন আমাদের জানাচ্ছেন, আমরা জাস্ট ফলো করছি।

"