ওমর ফারুক নাঈম, মৌলভীবাজার
বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস
নয় মাসে ৩৯১ চা শ্রমিক যক্ষ্মা আক্রান্ত
প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের শরীরে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকদের মধ্যে ৩৯১ জন যক্ষ্মা রোগি শনাক্ত করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, মৌলভীবাজারের চা শিল্পাঞ্চলের ৩৮টি চা বাগানে নয় মাসে (এপ্রিল ২০১৭ থেকে জানুয়ারি ২০১৮) দুই হাজার ৪৯০ জন চা শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে মোট ৩৯১ জন যক্ষ্মা রোগি শনাক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, চা শ্রমিকদের মধ্যে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। সংশ্লিষ্টদের মতে, চা শ্রমিকদের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস ও অপুষ্টিই এর প্রধান কারণ। আর সহায়তা পেলে অবহেলিত এই রোগীদের দ্রুত শনাক্তের মাধ্যমে রোগ নির্মূল করা সম্ভব। সরকারিভাবে চা বাগানে রোগের যথাযথ শনাক্ত কার্যক্রম না থাকার কারণে এখনও বহু রোগি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, যক্ষ্মা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা, চা বাগানে ঘনবসতি, নোংরা পরিবেশ, ধূমপান ও মদ্য পানসহ নানা কারণে চা শ্রমিকরা ব্যাপক হারে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা হিড বাংলাদেশ এর কো অর্ডিনেটর পরেশ দেবনাথ বলেন, যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। যা ফুসফুসে আক্রমণ করে, কিন্তু এটি কিডনি, মেরুদ- এবং মস্তিষ্কের মত শরীরের যে কোনও অংশ আক্রমণ করতে পারে। এর ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত না সবাই অসুস্থ হয়ে ওঠে। যদি এটি যথাযথভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে যক্ষ্মা রোগ মারাত্মক হতে পারে। তিনি আরো বলেন, চা শ্রমিকরা দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। ঘনবসতি, নোংরা পরিবেশে বসবাস, পুষ্টিহীনতা এবং অসচেতনতার কারণে অধিক পরিমাণে যক্ষ্মাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, চাষাবাদ ও ময়লা পরিবেশে বসবাস এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভাব চা বাগান শ্রমিকদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগের বিস্তারের জন্য দায়ী। হিড বাংলাদেশের তথ্য মতে, গত বছর সিলেটের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের ১৬ টি উপজেলায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত চা শ্রমিকের সংখ্যা ১,৩৮২ জন। চ্যালেঞ্জ টিবি প্রকল্প এ পর্যন্ত ১.৪৩ লাখ রোগি এবং হেজ-রান প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৮৪ রোগি নিরাময় হয়েছে। কয়েকজন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত চা শ্রমিক জানান, তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশি, বুকের ব্যথা এবং জ্বরের কারণে যন্ত্রণায় ছিলেন। প্যারাসিটামল এবং নাপা খেয়েও কাজ হচ্ছিল না। শেষমেষ টিবি কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা করে যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়েছিল। চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সিতা রাম বিন বলেন, চা বাগানে মদের পাট্রায় গিয়ে মদ পান, গাঁদাগাঁদি আর নোংরা পরিবেশে বসবাস ও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে যক্ষ্মা রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে চা শ্রমিকরা। বাড়িঘরের অবস্থা ও অসচেতনতা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভাব, নোংরা পরিবেশ ও কলোনী সমূহে ঘনবসতি বেশি থাকায় চা বাগানগুলোতে যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক বেশি।
হামিদিয়া চা বাগানের জিএম সিরাজুল ইসলাম জানান, চা বাগানে যক্ষ্মা রোগি বেশি। বাগানের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়মিত কফ পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের জন্য নিয়মিত কফ পরীক্ষার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়।
"