সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি

  ১৮ মার্চ, ২০১৮

যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ ২০ জেলায় সঙ্কটের আশঙ্কা

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের বৃহৎ ও একমাত্র দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা (জেএফসিএল) বন্ধ থাকায় চলতি বোরো মওসুমে উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলায় সার সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে। সেচ মওসুমে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সঙ্কটের অযুহাতে গত ৯ মার্চ থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় সহ¯্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারি বেকার হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, দেশে মোট ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৭ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় ১৯ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ছয় ইউরিয়া সার কারখানা থেকে চাহিদার ৬ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়। যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবা সুলতানা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ১৯৯১ সালে যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। দৈনিক ১৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম এ কারখানায় প্রতিদিন ৩৭০ পিএসআই চাপে গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে। তিতাস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না দিয়ে সর্বোচ্চ ১২০-২০০ পিএসআই চাপে গ্যাস দিলে কারখানার উৎপাদন ও নির্ধারিত অঞ্চলে ইউরিয়া সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়। এরই মধ্যে গত ৮ মার্চ তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মীর মশিউর রহমান যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধের চিঠি দেয়। শিল্পখাতে গ্যাস সঙ্কট ও চলতি সেচ মওসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সচল রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পরদিন রাত ১১টা থেকে কর্তৃপক্ষ যমুনা সার কারখানার এনজি কম্প্রেসর ও সব ইউনিটসহ ইউরিয়া উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। মাহবুবা সুলতানা আরও বলেন, গত ১০ মার্চ একটি চিঠিতে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থাকে (বিসিআইসি) জানানো হয়েছেÑকারখানা আকস্মিক বন্ধ হয়ে পড়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনাসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, উৎপাদন বন্ধ থাকায় যমুনা সার কারখানার নির্ধারিত এলাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলায় সার সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে জেএফসিএল ঘুরে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের জুন পর্যন্ত বিসিআইসি যমুনা সার কারখানাকে ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। কারখানা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ ৮ মেট্রিক টন। তবে চাহিদা মেটাতে সার আমদানি করছে সরকার।

সঙ্কটের আশঙ্কার কথা ও সার আমদানির বিষয়টি স্বীকার করে যমুনা সার কারখানার এমডি মাহবুবা সুলতানা বলেন, সারের চাহিদা মেটাতে সরকারকে বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিসিআইসির হাতে ৬-৭ লাখ মেট্রিকটন আমদানি করা সার মজুদ রয়েছে। তবে কবে কারখানায় উৎপাদন চালু হবে তা বলতে না পারলেও তিনি বলেন, সরকার চাইলে যে কোনো সময় কারখানা চালু হবে। আরও সঙ্কটের আশঙ্কা থাকলেও সার অমাদানিসহ বিসিআইসির সার্বিক কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, সরকার যে কোনো মতে সঙ্কট মোকাবেলা করবে।

এদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় প্রায় সহ¯্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারি বেকার হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী জানান, তিন শতাধিক দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিকসহ সহ¯্রাধিক লোক সরাসরি কারখানার আয়ের সাথে সম্পৃক্ত। কাজ না থাকায় এরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। কারখানাটি দ্রুত চালু করতে তিনি স্থানীয়রা সরকারকে অনুরোধ জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist