বাকৃবি প্রতিনিধি
‘চিয়া শস্য’ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে দাবি বাকৃবি গবেষকের
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মানব শরীরের জন্য একটি অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড। যা মানবদেহ থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক দ্রব্য বের করে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু কেবল কিছু সামুদ্রিক এককোষী শৈবাল এবং সামুদ্রিক মাছ থেকেই উচ্চমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। তাই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের বিকল্প উৎস খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন প্রায় ৭ বছর ধরে চিয়া শষ্য নিয়ে গবেষণা চালান।
অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন বলেন, চিয়া হলো তৈল জাতীয় ফসল। এটি প্রধানত মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মায়। চিয়া শস্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ আমিষ (১৫-২৫ %), চর্বি (৩০-৩৩%), ফাইবার (১৮.৩০ %) এবং এ্যাশ (৪-৫%) থাকে। তবে এর মধ্যে থাকা সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ উপাদান হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ( প্রায় ৬৭.৮%)। সামুদ্রিক এককোষী শৈবাল এবং সামুদ্রিক মাছ থেকেই উচ্চমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে এসব দ্রব্য সহজলভ্য না হওয়ায় এবং দাম বেশি হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই খাবার হিসেবে চিয়া শস্য খেলে এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের কোলেস্টরল কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়াও চিয়া শস্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় রেডিক্যালস বের করে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।
গবেষণার প্রথমে ২০১০ সালে চিয়া বীজ দেশে নিয়ে আসেন ড. আালমগীর হোসেন। এরপর বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগীয় মাঠে চারবছর ধরে চিয়া বীজের অভিযোজন পরীক্ষা করেন। অভিযোজন পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর তিন বছর ধরে চিয়া বীজের চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করেন। ২০১৭ সালে দেশের পাবনা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও চরাঞ্চলে চিয়া চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। দেশে চাষকৃত এই জাতটির তিনি নাম দেন ‘বাউ-চিয়া’।
গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন-ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদুল করিম, মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও গবেষণা সহযোগী মো. আরিফ সাদিক পলাশ এবং আহাদ আলম শিহাব। দেশীয় আবহাওয়ায় চিয়ার চাষাবাদ সম্পর্কে ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সাধারণত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে জমিতে বীজ বোনা যেতে পারে। হেক্টর প্রতি প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি বীজ লাগবে। জমিতে বীজ লাগানোর ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যাবে। এই উদ্ভিদের পোকা-মাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশর প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ দুই টন উৎপাদন লাভ করা সম্ভব। দেশে মাঠপর্যায়ে এর সম্প্রসারণ সম্পর্কে ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন,‘খুব শীঘ্রই এই জাতটি অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে নেওয়া হবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চিয়া চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় দেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
"