পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর জয়িতা লাইজুর দিন বদলের গল্প...
পরিশ্রমই বদলে দিতে পারে মানুষের ভাগ্য, এমনটি বললেন কর্মযজ্ঞে বিশ্বাসী তিন সন্তানের জননী লাইজু। পটুয়াখালী পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে মেয়ের মধ্যে লাইজু দ্বিতীয় সন্তান। অর্থাভাবে এসএসসি পাশ করা হয়নি। বিশ বছর বয়সের সময় ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের কবির মৃধার সাথে বিয়ে হয় তার। লাইজু বাবার বাসায় স্বামীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্বামী বেকার কি করবে, বাবার টানা পোড়নের সংসারে কতদিন বোঝা হয়ে থাকবে। এ ভাবনা চিন্তার এক পর্যায় দশ বছর আগে বাসার নিকটে এনজিও থেকে ১০ হাজার টাকা লোন নিয়ে বাবার বাসার পিছনে ছোট জায়গায় মুরগির বাচ্চা কিনে লালন পালন করা শুরু করে লাইজু।
কিছুদিন পর দুই’শ মুরগি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা মুনাফার ১৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাভী গরু কিনে লালন পালন করে এবং বাকী টাকা দিয়ে মুরগী বাচ্চা কিনে। পাশাপাশি তিতাস সিনেমা হলের পূর্ব পাশে ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়ে কেনাবেচা করে স্বামী কবির মৃধাকে নিয়ে। দুই বছর পর ১৩ হাজার টাকায় কেনা গাভী গরুটি দুইটি বাচ্চাসহ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে, এ বিক্রিত টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে সবুজবাগস্থ ভিপি দুলাল চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী গরু ক্রয় করে। বর্তমানে তার ৬টি গাভী গরু ও দুইটি বাচ্চা রয়েছে যার মূল্য হবে ৬ লক্ষাধিক টাকা বলে লাইজু জানায়। এছাড়াও লাইজু তার লভ্যাংশ টাকা দিয়ে ২টি ভেড়া কিনে লালন পালন করে। বর্তমানে ১টি বাচ্চাসহ ১০টি ভেড়া রয়েছে যার মূল্য হবে লক্ষাধিক টাকা। সেলাই মেশিন চালানোসহ মুরগি, গরু ও ভেড়া লালন পালন এর পাশাপাশি তিতাস সিনেমা হলের মোড়ে ঘরোয়া পরিবেশে কবির মৃধা নামে একটি ভাতের হোটেল ব্যবসা করে, সে এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ সব ব্যবসা পরিচালনা করে লাইজু তার তিন ছেলে মেয়েকে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে আসছে। তার দুই ছেলের একজন কলেজে, অন্যজন স্কুলে ও মেয়েটি পড়ছে মাদরাসায়।
তার এ অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে সমগ্র দেশব্যাপী পরিচালিত ‘জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শীর্ষক বিশেষ কার্যক্রমের আওতায় “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে জেলা পর্যায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জয়িতা-র সম্মানে ভূষিত করেছে জেলা প্রশাসন। লাইজ তার অনুভূতি প্রকাশে বলেন, আমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি, আমার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি, সরকার আমাকে যে সম্মান দিয়েছে, তাতে আমি অনেক গর্বিত ও অনেক খুশি।
"