আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুর

  ১৪ মার্চ, ২০১৮

নানা সংকটে মাদারীপুরের প্রেক্ষাগৃহ ২ শতাধিক লোক বেকার হওয়ার পথে

আকাশ সাংস্কৃতির প্রভাব, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও মানসম্মত সিনেমা তৈরি না হওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে মাদারীপুরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। ফলে সিনেমা শিল্পের সাথে জড়িত জেলার প্রায় ২ শতাধিক ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা সময় তাদের বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক পরিবার।

সরেজমিনে পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মাদারীপুরের চার উপজেলায় মোট ১৪টি সিনেমা হল ছিল। এরমধ্যে মাদারীপুর সদরের ইউনাইটেট টকিজ, ইউনির্ভাসাল টকিজ, চরমুগরীয়া মুক্তা সিনেমা হল, খাগদিতে মনি সিনেমা হল, রাজৈরের সোনালী, রুপালী, প্রতিভা ও মহুয়া সিনেমা হল, শিবচরের সুরভী, মিথুন, পলাশী ও উৎরাইলে মেলডী সিনেমা হল, কালকিনিতে সুরভী ও সাজন সিনেমা হল। কিন্তু বর্তমানে জেলায় যে ৬টি সিনেমা হল চালু আছে, তাও বন্ধ হওয়ার পথে।

গত কয়েকদিনে তিন-চারটি সিনোম হল ঘুরে জানা যায়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখার মত দেশি মানসম্মত ছবি তৈরি না হওয়া এবং ইংরেজি যৌনস্পর্শকাতর ছবি চালু রাখার আদলে দর্শকরা দেশি সিনেমা উপভোগে বর্জন করাসহ সিনেমা বিমুখী হচ্ছে। পাশাপাশি অনেকেই ভারতীয় হিন্দি-বাংলা সিনেমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সিনেমা হলের ভিতরে দর্শকের দেখার নেই কোন ভালো পরিবেশ, এছাড়া ঘরে ঘরে টেলিভিশনের পাশাপাশি ডিসের লাইন, ইন্টারনেট ইত্যাদি কারণে সিনেমা ব্যবসায় ধস নেমেছে বলে অনেকেই ধারণা করেন। ইতিমধ্যে অনেক সিনেমা হল ভেঙে দোকান পাট ও মার্কেট নির্মাণ কাজ চলছে।

বেলাল রিজভী নামে এক ব্যক্তি বলেন, এদেশের সিনেমা সমাজের উন্নয়ন, পরিবর্তনের কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বেশিরভাগ সিনেমাতেই নগ্নতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় দর্শক সংকট। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ছবিতে কোন মান সম্মত কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায় না। এসবের কারণেই দেশি সিনেমা ছেড়ে দিয়েছে অনেক দর্শকরা। ভিড় করেছেন ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালগুলোতে।

ইউনাইটেড টকিজের কর্মচারী মো. খলিল সরদার বলেন, আগে সিনেমা হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছবি দেখতে আসতো, এখন আর তা দেখা যায় না, কারণ বর্তমানে পরিবার নিয়ে দেখার মত কোনো সামাজিক সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না। এমনকি ডিসে ঘরে বসে ৮০ থেকে ৯০টি চ্যানেলে বিভিন্ন চাহিদামত সিনেমা-নাটক দেখতে পারছেন। তাই ভালো সিনেমা নির্মাণ ছাড়া দর্শকদের চাহিদা মেটানো খুবেই কঠিন বলে মনে করেন তিনি। বাদামতলা সিনেমা হলের অপারেটর জগদিস গাঙ্গুলী বলেন, এক সময় সিনেমা হলে আমরা দর্শকদের কোন সিট দিতে পারতাম না ভিড়ের কারণে। তারপরও দর্শকরা টিকিট নিয়ে হলের ভিতরে দাঁড়িয়ে ছবি দেখতেন। বর্তমানে সিনেমা হলের ব্যবসায় ধস নেমেেেছ। ৮-৯ জন কর্মচারী লাগে এই সিনেমা হলটি পরিচালনা করতে। লসের কারণে প্রতিমাসে কর্মচারীরদের বেতন দিতে পারছে না।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মাদারীপর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান মন্টু খান বলে বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনার আদলে মানসম্মত ছবি তৈরি করা, বাংলাদেশ সরকারে পৃষ্ঠপোষকতা এই মুর্হুতেই খুবই প্রয়োজন। তা না হলে সিনেমা হলের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশের মানসম্মত ছবি তৈরি না হওয়ায় সিনেমা হলগুলো দর্শক সংকটে ভুগছে। তাছাড়া সিনেমা হলগুলোর স্বাভাবিক পরিবেশ আগের মতো আর নেই। ভারতে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির মধ্যেও মানসম্মত ছবি পরিবেশন করা হয় বলে এখনো সিনেমা হলগুলো দর্শক জমজমাট। একমাত্র মানসম্মত ছবি নির্মাণের মাধ্যমে দেশের বন্ধ হওয়া বা অচল হওয়া সিনেমা হল আবার তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে বলে মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist